অমর স্মৃতি, চিরঞ্জীব আদর্শ: সুজিত রায় নন্দী
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
১৫ই আগস্ট—বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাবিধুর দিন।
১৯৭৫ সালের এই কালরাতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে। এটি কেবল একজন রাষ্ট্রনায়ককে হত্যার ঘটনা নয়, এটি ছিল সদ্য স্বাধীন একটি জাতির আত্মাকে হত্যার এক কলঙ্কজনক প্রচেষ্টা।
এই দিন তাই কেবল শোকের নয়, বরং শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নেবার দিন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এর পেছনে ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
ঘাতকরা নারী-শিশুকেও রেহাই দেয়নি। ইতিহাসের অন্যতম বর্বর ও কাপুরুষোচিত এই হত্যার পর বাংলাদেশ পিছিয়ে যায় উল্টো পথে।
খুনিদের রক্ষায় জারি করা হয় কলঙ্কজনক ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’, যাতে বিচারের পথ রুদ্ধ হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়। সংবিধানের চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ—চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে ঠেলে দেওয়া হয় সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস আর প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধকারে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয়। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, ৫ আগস্ট, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের সূত্রে গাঁথা।
ঘাতকেরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর নাম ও আদর্শ মুছে যাবে। কিন্তু ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করা গেলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করা যায়নি।
তিনি ছিলেন শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল তাঁর রাজনীতির মূলভিত্তি।
আজ নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস, তাঁর সংগ্রাম ও ত্যাগ সম্পর্কে জানাতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো সক্রিয়—বারবার বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। অবৈধ সরকারের ছত্রছায়ায় আজও চলছে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা, দায়মুক্তি দিয়ে হত্যাকারীদের রক্ষা করা হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চোখেও বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি মানচিত্র—তিনি বাঙালির চেতনায় অমর।
১৫ই আগস্ট তাই শুধু শোকের নয়, এটি আমাদের বজ্রকঠিন শপথের দিন।
আসুন, এই শোকাবহ দিনে আমরা জাতির পিতার রক্তঋণ শোধের অঙ্গীকার করি। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে হেঁটে, সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা রক্ষার শপথ নেই।
আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ই আগস্টের সব শহীদকে।
“যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা, গৌরী-মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান
দিকে দিকে আজ রক্তগঙ্গা, অশ্রুগঙ্গা বহমান
তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়—
জয় মুজিবুর রহমান।”
সুজিত রায় নন্দী
সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

















