বিজয়ের ডিসেম্বর: মুক্তির চেতনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য—পর্ব ৮
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অষ্টম পর্বটি উৎসর্গ করা হলো আমারই মেডিকেল কলেজের সহপাঠী ও রাজনৈতিক সহকর্মী ডাক্তার কুহুকে, যার বাবা ডাক্তার এ কে এম গোলাম মোস্তফা ১৯৭১ সালের ৩০ শে মার্চ চট্টগ্রামে শহীদ হন ।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে: বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন
একটি জাতির উন্নয়ন ও পরিচয় গঠনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা জাতির সংস্কৃতি, রাজনীতি, অগ্রগতি এবং মূল মূল্যবোধকে রক্ষা ও পরিচালনা করেন। বুদ্ধিজীবীরা শুধু একাডেমিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তারা সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী নানা শ্রেণীর চিন্তাবিদ, পেশাজীবী ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত করেন। বুদ্ধিজীবীদের প্রধান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছেন একাডেমিক, গবেষক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, জনবুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, কর্মী, সংস্কারক, নীতি বিশ্লেষক, আইনজীবী, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ এবং ব্যবসায়ি।
বুদ্ধিজীবীরা সেই ধারণা প্রণয়ন করেন যা একটি জাতির পরিচয়, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে। তারা অজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে, সমালোচনামূলক চিন্তাকে অনুপ্রাণিত করে এবং ন্যায় ও অগ্রগতির পথে নেতৃত্ব দেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীরা জনসচেতনতা ও যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উপরের আলোচনায় যেমন বোঝা যায়, কোনো জাতির জন্য বুদ্ধিজীবীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ, ভারাক্রান্ত মন ও দুঃখভরা অনুভূতি নিয়ে আমি স্মরণ করতে চাই সেই বুদ্ধিজীবীদের যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন—যা ছিল জাতির উজ্জ্বল মেধাবীদের নিশ্চিহ্ন করে ভবিষ্যৎকে পঙ্গু করার একটি পরিকল্পিত গণহত্যা।
যুদ্ধের শেষদিকে, বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা শত শত বাঙালি বুদ্ধিজীবী—অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী—কে অপহরণ ও হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তিকে দুর্বল করার লক্ষ্যে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে শুরু করে পুরো যুদ্ধজুড়ে ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের সংগঠিতভাবে হত্যা করেছিল। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১—বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে—তারা সুপরিকল্পিতভাবে শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্য করে হত্যা চালায়। তাঁদের অনেকের লাশ পরে রায়েরবাজার ও মিরপুরে বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো শুধু যুদ্ধাপরাধই ছিল না; বরং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড মানব ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ও জঘন্য অপরাধ। বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী মানুষ আজও সেই ট্র্যাজেডির প্রভাব অনুভব করে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবার এবং পুরো জাতি তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা এবং কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।
আজ ১৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে। এ দিনটি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, নানা কর্মসূচি ও আত্মত্যাগ স্মরণে পালন করা হয়।
সকল হৃদয় দিয়ে আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশ্বাস করি এবং আশা করি, বাংলাদেশের মানুষ কখনও এই মহান বীরদের ভুলবে না। এই নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা—পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী—কখনও তাদের কুখ্যাত কর্মকাণ্ডের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
আজিজ লং আইল্যান্ড

















