Logo

আন্তর্জাতিক    >>   মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধনের নেপথ্যের দুই প্রধান কুশীলব: জাহিদুল ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধনের নেপথ্যের দুই প্রধান কুশীলব: জাহিদুল ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধে পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধনের নেপথ্যের দুই প্রধান কুশীলব: জাহিদুল ইসলাম

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিকল্পিত ও পৈশাচিক কায়দায় বাঙালি জাতির মেধা ধ্বংসের যে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়েছিল, তার অন্যতম প্রধান কুশীলব ছিল আলবদরের অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মঈনুদ্দীন এবং আলবদরের চিফ এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খান।
১৯৭২ সাল থেকে চৌধুরী মঈনুদ্দীন লন্ডনে অবস্থান করছে এবং আশরাফুজ্জামান খান বসবাস করছে যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকায় ১৫ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত চলা পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযানে প্রতিটি বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের সময় এই দুই কুলাঙ্গার সরাসরি উপস্থিত ছিল।
আশরাফুজ্জামান খান নিজ হাতে অন্তত ৮ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ রয়েছে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন—শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, ড. আবুল খায়ের, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক রশিদুল হাসান, অধ্যাপক ড. ফয়জুল মহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. গোলাম মুর্তজা।
পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা রাও ফরমান আলীর ডেস্ক ডায়েরিতে থাকা প্রায় তিন হাজার বুদ্ধিজীবীর নামের তালিকা প্রস্তুত করেছিল এই দুই নরপিশাচ। সেই তালিকার ভিত্তিতেই একের পর এক অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
১৪ ডিসেম্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে আলবদর সদস্যরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ভাই লুৎফল হায়দার চৌধুরী অনুরোধ করেছিলেন—
‘আপনারা আমার ভাইকে নিয়ে যাচ্ছেন, একটু খেয়াল রাখবেন।’
এক পর্যায়ে তিনি মুখোশধারী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন,
‘আপনি মুখোশ পরে আছেন কেন?’
এই বলে মুখের রুমাল সরিয়ে দিলে অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী তাঁকে চিনে ফেলে বলেন—
‘তুমি মঈনুদ্দিন না?’
উত্তরে সে বলে,
‘জ্বি স্যার, আমি মঈনুদ্দিন, আপনার ছাত্র।’
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরপরই আলবদরের চিফ এক্সিকিউটর আশরাফুজ্জামান খানের নাখালপাড়ার ৩৫০ নম্বর বাড়ি থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। সেই ডায়েরির দুটি পাতায় ২০ জন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীর নামের পাশে লাল টিক চিহ্ন ছিল—যাঁদের প্রত্যেকেই পরবর্তীতে শহীদ হন।
বিজয়ের একদিনের মধ্যেই আশরাফুজ্জামান খান পাকিস্তানে পালিয়ে যায় এবং রেডিও পাকিস্তানে চাকরি নেয়। পরে সে নিউইয়র্কে চলে আসে। বর্তমানে সে ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (আইসিএনএ)–এর কুইন্স শাখার প্রধান হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই চৌধুরী মঈনুদ্দীন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয় এবং বর্তমানে সে সেখানকার নাগরিক।
যুদ্ধের সময় আশরাফুজ্জামান খান ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির)। চৌধুরী মঈনুদ্দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন একই সংগঠনের নেতা ছিল। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে সে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেয়।
দৈনিক পূর্বদেশের প্রধান প্রতিবেদক এএনএম গোলাম মুস্তাফা চৌধুরী মঈনুদ্দীনের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন। তাঁর ভুলত্রুটি সংশোধনে সহায়তা করতেন। কিন্তু সেই গোলাম মুস্তাফাকেই ১১ ডিসেম্বর ভোরে চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আলবদর সদস্যরা তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই ইতিহাস শুধু স্মরণ করার জন্য নয়—এটি ন্যায়বিচার ও জাতিগত দায়বদ্ধতার প্রশ্ন।
জাহিদুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা