Logo

আন্তর্জাতিক    >>   নিউইয়র্কে জেনোসাইড ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সেমিনার: বিচারের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

নিউইয়র্কে জেনোসাইড ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সেমিনার: বিচারের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

নিউইয়র্কে জেনোসাইড ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সেমিনার: বিচারের নামে প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :
‘আন্তর্জাতিক গণহত্যার শিকারদের স্মরণ ও গণহত্যার মতো জঘন্য বর্বরতা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে নিউইয়র্কে জেনোসাইড একাত্তর ফাউন্ডেশন ইউএসএ আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তথাকথিত বিচারের নামে প্রহসন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গত রোববার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
ড. মোমেন বলেন, গত ১৫ মাসে বাংলাদেশে যে বর্বরতা ও অরাজকতা চলছে, তাতে তিনি গভীরভাবে শঙ্কিত। তাঁর আশঙ্কা, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের মতো ঘটনা আবারও ঘটতে পারে এবং কারাবন্দি আওয়ামী লীগ নেতাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কী ভুল করেছে বা কী ভালো করেছে—সেসব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে আজ আমাদের দেশটাকে বাঁচাতে হবে। এই দেশ আমাদের সবার।”


তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একসময় তলানী থেকে উঠে ‘ল্যান্ড অব অপারচুনিটি’তে পরিণত হয়েছিল। অথচ বর্তমানে দেশ আবারও নীচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মব কালচার এবং উগ্রবাদী মানসিকতা বাংলাদেশকে একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র থেকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “এই মব কালচারকে অবশ্যই প্রতিস্থাপন করতে হবে। না হলে আরেকটি গণহত্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কথিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আবারও তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হচ্ছে। দুই শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৩০ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছে, যাদের প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। শেখ হাসিনা সরকারের সময় দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে আনা হলেও বর্তমানে তা আবার প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ আবারও ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
জেনোসাইড একাত্তর ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কলামিস্ট ড. প্রদীপ করের সভাপতিত্বে সেমিনারটি শুরু হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অমর। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩–এর নির্দিষ্ট এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও প্রহসনমূলক। সংসদীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের কার্যকারিতা সম্প্রসারণ সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট রকিবউদ্দিন মন্টু, প্রবীণ সাংবাদিক এম ফজলুর রহমান, চিত্রশিল্পী ড. ওবায়েদ উল্লাহ মামুন, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি ও ফারুক হোসেন, কবি হাসান আল আবদুল্লাহসহ প্রবাসী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বক্তারা একবাক্যে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত সাম্প্রতিক রায় বিচারের নামে তামাশা, যা ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ‘ফরমায়েশি বিচার’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ারের সঞ্চালনায় সেমিনারের শুরুতে ১৯৭১ সালের গণহত্যার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রকৌশলী সাবিনা হাই উরমির পরিচালনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর একাত্তরের ৩০ লক্ষ শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে প্রদত্ত লিখিত বক্তব্যে ড. প্রদীপ কর বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ মূলত ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত একটি রাষ্ট্রীয় আইন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই আইনের চরিত্র বদলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ারে পরিণত করা হচ্ছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
বক্তারা বলেন, একাত্তরের গণহত্যার বিচার বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি পবিত্র দায়িত্ব। এই আইনের অপব্যবহার শুধু বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শহীদদের আত্মত্যাগকেও অবমাননা করছে। সেমিনার থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধভাবে সত্য, ন্যায় ও গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সূত্র : হাকিকুল ইসলাম খোকন ।