দীপু দাসের লাশ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পোড়ানোর প্রতিবাদ নিউইয়র্কের ভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :
ময়মনসিংহের ভালুকায় গার্মেন্টস শ্রমিক দীপু দাসকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা, তার লাশ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে নিউইয়র্কের ভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন।
গত ২১ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ’র আয়োজনে প্রায় তিন শতাধির মানুষের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পর একই স্থানে রাত ৭টায় ‘প্রগ্রেসিভ ফোরাম অব ইউএসএ’ একই দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ’র আয়োজনে সন্ধা ৬টায় প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী সমাবেশে বিভিন্ন মন্দির কমিটি, পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় তারা অবিলম্বে দীপু দাস হত্যার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ’র সভাপতি ভজন দাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রামদাশ ঘরামীর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রভূ নিত্যানন্দ কিশোর দাশ , কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য় ,সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু গোপ , ড. দীলিপ নাথ, লেখক-কলামিষ্ট শিতাংসু গুহ, সুকৃতি বড়ুয়া , বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নবেন্দ দত্ত , কমিউনিটির নেতা প্রিয়তোষ দে, মহামায়া মন্দীরের সভাপতি রঞ্চিত সাহা , সংগঠনের সহ- সভাপতি জয়দেব গাইন , যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান,উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান ও এমদাদ চৌধুরী, সংগঠনের পরিচালক বোর্ডের সম্পাদক সুশীল সিনহা, কমিউনিটির নেতা তাপস সাহা ,উত্তম কুমার সাহা , সুতিপা রায়,রূপ কুমার ভৌমিক, গোবিন্দ দত্ত , ওম শক্তি মন্দীরের সভাপতি গৌরাঙ্গ রায়, সদানন্দ রায়, সুমন নাথ, স্বীকৃতি বড়ুয়া, সমীর সরকার প্রমুখ।
এ সময় বক্তরা বলেন, ‘দীপু দাস হত্যাকাণ্ড কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতার একটি ভয়াবহ বহিঃপ্রকাশ। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা, হত্যা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় ভাঙচুর বেড়ে চলেছে, যা উদ্বেগজনক।’
বক্তারা দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার ঘটনাকে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ হিসেবে অভিহিত করে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, "গুজব ছড়িয়ে একজন নিরপরাধ মানুষকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।" অনতিবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানায় কর্মরত শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৭) সহকর্মীরা ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগ এনে মারধর শুরু করে। পরে লোকজন তাকে কারখানা থেকে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে এবং মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

















