Logo

ইউএসএ নিউজ    >>   আবারও ইতিহাস গড়লেন সোমা এস সাঈদ: নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ

আবারও ইতিহাস গড়লেন সোমা এস সাঈদ: নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ

আবারও ইতিহাস গড়লেন সোমা এস সাঈদ: নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য গৌরবের আরেকটি অধ্যায় রচিত হলো নিউইয়র্কে। বহুজাতিক সমাজে প্রথম বাংলাদেশি ও প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি সোমা এস সাঈদ।
গত বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকাল ৫টায় এক অনাড়ম্বর কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিচারিক অঙ্গনে নিজের মেধা, সততা ও পেশাদারিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সোমা এস সাঈদ আবারও ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলে ধরলেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, সিনেটর টবি অ্যান স্ট্যাভিস্কি, অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভন রিচার্ডস এবং নিউইয়র্ক কোর্ট অব আপিলসের প্রধান বিচারপতি রোয়ান উইলসন বলেন, সোমা এস সাঈদের এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি একইসঙ্গে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির জন্য গর্বের বিষয়।


বিচারপতি সোমা এস সাঈদ প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাবউদ্দিন সাঈদ এবং টাঙ্গাইলের একটি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আমিনা বেগম সাঈদ-এর কন্যা। মাত্র ১২ বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে এসে তিনি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা শেষে তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে আলবেনির ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটির ল’ স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে জুরিস ডক্টর (JD) ডিগ্রি লাভ করেন।
দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে এটর্নি হিসেবে পেশাগত জীবনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে সোমা এস সাঈদ নিজেকে একটি বিশেষ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০২১ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নে কুইন্স কাউন্টিতে নিউইয়র্ক সিটি সিভিল কোর্টের বিচারক নির্বাচিত হয়ে প্রথমবার ইতিহাস রচনা করেন। পরবর্তী সময়ে তাকে ম্যানহাটানের নিউইয়র্ক কাউন্টি ক্রিমিনাল কোর্টে বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা তিনি ২০২৩ সাল পর্যন্ত সফলভাবে পালন করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি পুনরায় কুইন্স কাউন্টি সিভিল কোর্টে বিচারপতির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
সর্বশেষ ৪ নভেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নির্বাচিত হন সোমা এস সাঈদ।
এই শপথ গ্রহণকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এবং মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিক ফজল আনসারী।
বিচারপতি সোমা এস সাঈদের স্বামী মিজানুর চৌধুরী এবং ভাই সাঈদ বলেন, তাদের এই অর্জন অভিবাসী সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণার উদাহরণ। লক্ষ্য স্থির রেখে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে গেলে বহুজাতিক সমাজেও যে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব, সোমা এস সাঈদ তার উজ্জ্বল প্রমাণ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় সোমাকে দলীয় প্রাইমারিতে অংশ নিতে হয়নি এবং সরাসরি মূল নির্বাচনে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, “এই বিজয় পুরো বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির বিজয়।”
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ এবং অভিবাসন আইনে বিশেষজ্ঞ এটর্নি অশোক কর্মকার পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সোমা এস সাঈদের এই উত্থান নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং তারা মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে আরও বড় অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহ পাবে।


পেশাগত সততা ও নেতৃত্বগুণের কারণে সোমা এস সাঈদ নিউইয়র্ক সিটি ইক্যুয়াল রাইটস এনফোর্সমেন্ট কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাইট অব জাস্টিস কাউন্সিলের বোর্ড মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এশিয়ান আমেরিকান জাজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মানিত সদস্য এবং কুইন্স কাউন্টি উইমেনস বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এটর্নি রোন্ডা বিন্ডা ও আয়েশা দেওয়ান-এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের বাণী পাঠ করে ছোট্ট জাহিন সাঈদ। অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় তিন শতাধিক বাংলাদেশি ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়।