ওসমান হাদিকে মেরে ফেলার মূল উদ্দেশ্য ছিলো দুইটি– ভারতবিরোধী রাজনীতিতে নতুন করে জ্বালানী দেওয়া এবং নির্বাচন বানচাল করা: যার ফলে ঘটে গেলো আরেকটি ৫ আগস্ট
মোহাম্মদ সাইমন ইসলাম তালুকদার :
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির বস্তাপঁচা সস্তা স্ক্রিপ্ট বুঝতে কোনো রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। নূন্যতম জ্ঞান থাকলেই বোঝা যায়– ভারতবিরোধী রাজনীতি দাঁড়িয়ে আছে যেসব ন্যারেটিভের উপর, তা গত ১৫ মাসে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা গোপন চুক্তি, দেশবিরোধী চুক্তির যেসব গল্প শুনিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং জনগণের সাথে সফলভাবে প্রতারণা করেছিলো, তা এখন ধরা পড়ে গেছে। আজ পর্যন্ত কোনো চুক্তি বাতিল করেনি, কোনো গোপন চুক্তির দলিল তন্নতন্ন করেও কোথাও খুঁজে পায়নি। ২৬ লক্ষ ভারতীয়র গল্প নিয়ে এখন টিনেজ ছেলেমেয়েরাও ট্রল করে।
মানুষ এখন প্রশ্ন করা শুরু করেছে। তাতে তাদের ভারতবিরোধী রাজনীতিতে নতুন জ্বালানীর দরকার পড়েছে। সেই জ্বালানী হচ্ছে ওসমান হাদির লাশ।
রাজনীতি যারা বোঝে, তারা জানে– নৈরাজ্য কখনো ফ্রি আসে না, এর পেছনে টাকা, প্ল্যান আর পৃষ্ঠপোষকতা লাগে। মাঠে লোক নামানো, ইনকিলাব মঞ্চ বানানো, মিডিয়াতে কৃত্রিম বুস্ট দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় ন্যারেটিভ ছড়ানো– সবকিছুর পেছনে টাকা লাগে। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক-ভিত্তিক ফান্ডিং নেটওয়ার্ক এবং চীনঘেঁষা কিছু অর্থপ্রবাহ নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সাংবাদিক অনুসন্ধান নতুন কিছু নয়। তাদের আদর্শিক শরিকদের জন্য অর্থ কোনো সংকট নয়, সংকট হলো সময় ও সুযোগ।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় ওয়াকার চুপ, আমেরিকান এম্বেসি চুপ, ব্রিটিশ এম্বেসি চুপ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও চুপ। এই নীরবতা কাকতালীয় না, রাজনৈতিক। কারণ একটাই– ইলেকশন। নির্বাচন হলে বিনা খরচে ক্ষমতা পাওয়া ইউনুস গোষ্ঠী, এনসিপি ও জামাতের হাতছাড়া হবে এবং বিএনপির হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই নির্বাচন ঠেকানোই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। নির্বাচন ঠেকানোর সবচেয়ে সস্তা ও কার্যকর উপায় হচ্ছে– নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা এবং "বিপ্লবী পরিস্থিতি" তৈরি করা।
এই প্রেক্ষাপটেই "ইনকিলাব মঞ্চ"। জীবনে কখনো রাজনীতিতে দৃশ্যমান না থাকা একজন ওসমান হাদিকে বরিশাল থেকে তুলে এনে সামনে ঠেলে দেওয়া হয়। তাকে দিয়ে এমন সব কথা বলানো হয়, যা সভ্য সমাজে বলা যায় না। তারপর মিডিয়াতে কৃত্রিমভাবে বুস্ট দেওয়া, ভারতবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে ট্র্যাপে ফেলা– সবশেষে সুযোগ বুঝে তাকেই "খেয়ে ফেলা"। এটা নতুন কিছু নয়, এদেশে বহুবার এই "ব্যবহার ও বর্জন"-এর রাজনীতি হয়েছে।
এরপর শুরু হয়েছে দোষ চাপানোর খেলা। মির্জা আব্বাস, ভারত, আওয়ামী লীগ– এই স্টেরিওটাইপ গল্পই বাজারে ছাড়া হয়েছে এবং হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে অশিক্ষিত, ইতিহাসবিমুখ ও আবেগনির্ভর জনগোষ্ঠী এসব গল্প গিলেও ফেলে। ফলাফল– নৈরাজ্যের লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় একটি বিভ্রান্ত প্রজন্মের হাতে।
তারপর শুরু হয়েছে পুরোনো বুলি– "বিপ্লবী সরকার চাই", "নতুন সংবিধান চাই", " নতুন বন্দোবস্ত চাই"। ইতিহাস বলে– এসব স্লোগানের শেষ পরিণতি কখনোই গণতন্ত্র নয়; বরং ক্ষমতা কুক্ষিগত করা একটি গোষ্ঠীর উত্থান।
আজ তাই অনেকেই আর বাংলাদেশের নাগরিক না, শুধু বাসিন্দা। রাষ্ট্র, সংবিধান, গণতন্ত্র– সবকিছু যেন দর্শকের আসনে। আর দর্শক হয়ে থাকা যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন সর্বনাশ অনিবার্য হয়ে ওঠে। দেখতে থাকুন– কারণ দেখাই এখন অনেকের একমাত্র কাজ। কিন্তু ইতিহাস শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ক্ষমা করে না।
মোহাম্মদ সাইমন ইসলাম তালুকদার ,সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

















