Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   শ্রী নৃসিংহদেবের প্রণাম মন্ত্র এবং তার প্রয়োগ বিধি: ড. মধুসূদন কৃষ্ণ দাস

শ্রী নৃসিংহদেবের প্রণাম মন্ত্র এবং তার প্রয়োগ বিধি: ড. মধুসূদন কৃষ্ণ দাস

শ্রী নৃসিংহদেবের প্রণাম মন্ত্র এবং তার প্রয়োগ বিধি: ড. মধুসূদন কৃষ্ণ দাস

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:

(ক). নৃসিংহদেবের বিভিন্ন প্রণাম মন্ত্র:

ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব হলেন শাক্ত, তান্ত্রিক ও বৈষ্ণব সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবদ্ বিগ্রহ। বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যুগে যুগে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আরাধনা করে এসেছেন এবং এখনও করছেন । শ্রীমৎ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ তাঁর বৃহৎ তন্ত্রসার বইতে বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে শ্রীনৃসিংহদেবের যে সব প্রণাম মন্ত্র উদ্ধার করেছেন সেগুলো বর্ণনা করা হলো ।

 

১. প্রথম প্রণাম ও জপমন্ত্র :

উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং

জলন্তং  সর্বতোমুখং ।   

নৃসিংহং ভীশনং ভদ্রং   

মৃত্যু-মৃত্য়ুং-নমাম্যহং।।    

উপরোক্ত মন্ত্রটি ৩২ অক্ষর বিশিষ্ট এবং প্রতিটি লাইনে ৮ টি করে অক্ষর রয়েছে । যাঁরা বৈষ্ণব তাদের মধ্যে অনেকেই এই মন্ত্রটির আগে ওঁ - এই শব্দ যোগকরে পাঠ করেন । আর যারা তান্ত্রিক তারা উক্ত মন্ত্রের পূর্বে এবং শেষে হ্রী - এই পদ যোগ করে জপ করেন । তন্ত্রশাস্ত্র বিশারদদের মতে এভাবে জপ করলে সাধকের সর্বপ্রকার কামনা-বাসনা পূর্ণ হয় । তাদের মতে উপরোক্ত মন্ত্র ন্যাস করে নৃসিংহদেবের নিম্নোক্ত মূর্তির ধ্যান করতে হবে ।   

ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের শ্রীমূর্তি এই প্রকার :- মানিক্যময় পর্বতের ন্যায় দেহ-কান্তি এবং নিজের শরীরের প্রভায় রাক্ষস-গণ ভীত হচ্ছে । দুই হাত হাঁটুর উপর বিন্যস্ত রয়েছে । তাঁর তিনটি নয়ন এবং তিনি রত্ননির্মিত বেদীতে উপবেশনরত । দুই হাতে শঙ্খ এবং চক্র রয়েছে । দন্ত দ্বারা নিকট বদন থেকে আগুনের শিখার ন্যায় জিহবা বহির্গত হয়েছে । তাঁর দীর্ঘ কেশর রয়েছে । দেহ নৃ-সিংহের আকার - অর্থাৎ অর্ধেক দেহ সিংহ আকৃতির এবং বাকী অর্ধেক দেহ মনুষ্য-এর ন্যায় । এই প্রকার মূর্তি মনে চিন্তা করে উপরোক্ত মন্ত্র জপ এবং ধ্যান করলে সবধরণের সিদ্ধি লাভ হবে বলে তন্ত্রশাস্ত্রবিদরা মনে করেন ।  

২. দ্বিতীয় প্রণাম মন্ত্র এবং জপ :

এই মন্ত্রটি মূলত তন্ত্রশাস্ত্রবিদগণ জপ করেন । এই মন্ত্রপাঠ বা জপ করেন তান্ত্রিকরা তাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য লাভের কামনায় ।

অং, হ্রী, ক্ষৌ, ক্ৰৌঁ  হুঁ ফট্‌ ।    

উপরের মন্ত্রটি ছয়-অক্ষর বিশিষ্ট | এই মন্ত্র পাঠ বা জপ করার সময় শ্রীনৃসিংহদেবের নিম্নোক্ত মূর্তির ধ্যান করতে হবে ।

শ্রীনৃসিংহদেবের মূর্তি কোপে বা রাগের কারণে লোলজিহবা এবং বিস্তৃত বদন । তাঁর তিনটি নয়ন রয়েছে যা চন্দ্র, সূর্য্য এবং অগ্নিস্বরূপ । পা থেকে নাভি পর্যন্ত তাঁর দেহের রং রক্তবর্ণ এবং উপরের অংশ শ্বেতবর্ণ (সাদা-বর্ণ) । দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর দেহ বিদীর্ণ-করছেন । শঙ্খ, চক্র,  পাশ, বজ্র এবং গদা ধারণ করে রয়েছেন । ভয়ঙ্কর তীক্ষ্ণ দাঁত বিশিষ্ট এবং মনিময় আভরনে বিভূষিত । এই প্রকার চিন্তা করে ধ্যান করে মানস-উপাচারে পূজা করতে পারলে শ্রীনৃসিংহদেব ভক্তকে সর্বতোভাবে কৃপা করেন ।

৩. তৃতীয় প্রণাম ও জপমন্ত্র: এই মন্ত্রটিও তন্ত্রশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে | মন্ত্রটি হলো : ক্ষ্রৌ । এই এক অক্ষর বিশিষ্ট মন্ত্রটিকে সব ধরণের কামনা-বাসনার ফলপ্রদ বলে তন্ত্র-বিশারদরা দাবি করেন । এই মন্ত্রের পুরশ্চরণে ৮ লক্ষ বার জপ এবং জপের দশাংশ - অর্থাৎ ৮০ হাজার বার হোম করলে ভক্তের সব ধরনের মনোবাসনা পূরণ হয় । সাধারণত তন্ত্রসাধনে রত বা বিশ্বাসী ভক্তগণ এই মন্ত্রটি জপ করতে পারেন ।                  

৪. চতুর্থ প্রণাম এবং জপ মন্ত্র :

এই মন্ত্রটি আট অক্ষর বিশিষ্ট এবং যে কোন সম্প্রদায়ের (তান্ত্রিক, শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ইত্যাদি) লোকেরাই এই মন্ত্র জপ করতে পারেন । মন্ত্রটি হলো -  জয় জয় শ্রী নৃসিংহ । এই মন্ত্রটিকে সাধকের কামপ্রদ মণিস্বরূপ বলা হয় | এক্ষেত্রেও এই মন্ত্রের পুনশ্চরণে ৮ লক্ষবার জপ এবং জপের দশাংশ - অর্থাৎ ৮০ হাজার বার হোম করতে হবে ।

৫. পঞ্চম প্রণাম এবং জপ মন্ত্র :

এই প্রণাম মন্ত্রটি ৩২ অক্ষর বিশিষ্ট । এতে ভক্তবৎসল শ্রীনৃসিংহদেব এবং তাঁর ভক্ত প্রহ্লাদ-এর কথা রয়েছে । মন্ত্রটি হলো -

নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদহ্লাদ দায়িনে ।

হিরণ্যকশিপোর্বক্ষ শিলাটঙ্ক-নখালয়ে ।।

অর্থাৎ যিনি ভক্ত প্রহ্লাদের আনন্দদাতা, যাঁর বাটালির মতো নখ হিরণ্যকশিপুর শিলার মতো বক্ষে আঘাত হেনেছিলো, সেই শ্রীনৃসিংহদেবকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি |

 (খ). নৃসিংহ মন্ত্রাদির প্রয়োগ বিধি ও ফল :

বিভিন্ন তন্ত্রশাস্ত্রে শ্রীনৃসিংহদেবের বিভিন্ন প্রণাম ও জপ-বিধি বর্ণনা করা হয়েছে | নিচে এই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো ।

১. যিনি বেলগাছের কাঠদ্বারা অথবা বেলপাতা দ্বারা ১ হাজার বার হোম করতে পারবেন তিনি নিশ্চয়ই লক্ষ্মীকে লাভ করতে পারবেন । আবার বেলফুল অথবা বেল দ্বারা হোম করতে পারলেও একই ফল লাভ হবে ।      

২. শ্রীনৃসিংহদেবের উপরে উল্লিখিত কোন মন্ত্র জপ করে দুর্ব্বা  দ্বারা শতবার হোম করতে পারলে রুগ্নব্যক্তি আরোগ্য লাভ করতে পারবেন ।

৩. যদি রাত্রে কোন দুঃস্বপ্ন দর্শন হয় তাহলে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের উপরোক্ত যে কোন মূর্তির ধ্যান করে যে কোন মন্ত্র জপ করলেই হবে । এতে আর দুঃস্বপ্ন দর্শন হবে না ।

৪. যদি রাত্রিকালে নিদ্রা না হয়, তবে উপরে উল্লিখিত যেকোন মন্ত্র জপ করলে সুখে-স্বচ্ছন্দে নিদ্রা হবে |

৫. যদি কোনব্যক্তি বনে বা জঙ্গলে বাঘ বা কোন হিংস্র প্রাণী অথবা কোন দস্যু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্মুখীন হন তবে উপরে উল্লিখিত প্রথম মন্ত্রটি জপ করতে থাকলে এই ভয় তৎক্ষণাৎ দূর হয়ে যাবে ।

৬. উপরে উল্লিখিত প্রথম অথবা দ্বিতীয় মন্ত্র দ্বারা ১ নং বিধিতে প্রাপ্ত হোমের ভস্ম দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে যদি সর্ব-অঙ্গে লেপন করা হয় তবে মন্ত্রের প্রভাবে বিষজনিত এবং গ্রহজনিত মহাভয় দূর হয়ে যাবে । অর্থাৎ যে কোন গ্রহের কু-দৃষ্টি দূর হয়ে যাবে ।       

৭. জাদু-টোনা, বানমারা, উচাটন, যে কোন উৎস থেকে মহা-উৎপাত এবং মহাভয় সৃষ্টি হলে প্রথম অথবা দ্বিতীয় মন্ত্রের উল্লিখিত নৃসিংহ মূর্তির ধ্যান করে ঐ মন্ত্র জপ করতে হবে | এতে ভক্তের সব আপদ-বিপদ এবং দুঃখ আর থাকবে না । এতে নিজের আত্মার বা হৃদয়ে মহাভীষণরূপে ঐ নৃসিংহদেবের ধ্যান করে পরে শত্রুকে হরিণ শিশুর ন্যায় ভাবনা করবেন এবং মনে মনে ঐ শত্রুর গলা চেপে ধরে সাথে সাথে একদিকে নিক্ষেপ করতে হবে । এরূপ করতে পারলে শত্রু এবং তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদি সহ সবার উচাটন - অর্থাৎ তাদের মনে মহাউদ্বেক এবং মহা-অশান্তি সৃষ্টি হবে ।

Dr. Monaranjan Dey, Professor of Economics Dhaka University,  Assistant director Bangladedh Bank. Writer of several Economics Books.