শহীদ বুদ্ধিজীবীরা কেবল স্মৃতি নন, তারা আমাদের বিবেক ও প্রতিবাদের অনন্ত প্রেরণা
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :
মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর–আলশামসের হাতে নির্মমভাবে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নিউইয়র্কে গভীর শ্রদ্ধা ও শোকের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫’। প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত উপেক্ষা করে গত ১৩ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কুইন্সের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় এই শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকা।
অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ঘোষণাপত্র পাঠ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতীকী আলোকশোক যাত্রা। প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার আহ্বায়ক মিথুন আহমেদ। একই সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দৃশ্যকলা ও স্থাপনা শিল্প—‘সেই সব স্মৃতির গ্রন্থনা’—এর পরিকল্পনা ও নির্দেশনাও দেন তিনি।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই বিশেষ দৃশ্যকলা ও স্থাপনা শিল্প কোনো সাধারণ পরিবেশনা নয়; এটি ছিল ইতিহাসের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্মম অপরাধের বিরুদ্ধে এক শক্ত উচ্চারণ এবং ভুলে না যাওয়ার এক অবিচল শপথ। পরিবেশনাটি নতুন করে প্রশ্ন তোলে—কেন চিন্তা, মনন ও মানবিকতার শত্রুরা আজও বুক ফুলিয়ে হাঁটে।
ঘোষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, বিজ্ঞানী ও সংস্কৃতিসেবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এই নির্মম গণহত্যা ছিল বাঙালি জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক গভীর ক্ষত, যার স্মৃতি আজও আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।
অনুষ্ঠানে নাটকের সংলাপ, কাব্যগান ও কবিতার মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরেন নাট্যব্যক্তিত্ব লুৎফুন নাহার লতা, বাচিক শিল্পী আবীর আলমীর, মিনহাজ আহমেদ শাম্মু, স্বাধীন মজুমদার, গোপন সাহা, বসুনিয়া সুমন, সাবিনা হাই উর্বি, তাহারিনা পারভিন প্রীতি, তাহমিনা শহীদ, জলি কর, মৃদুল আহমেদ, সুপর্ণা সরকার রীমা ও সুতপা মন্ডল। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও তুষারের ফোঁটার মাঝেও আলোকশোক যাত্রা যেন উপস্থিত সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয়—শহীদ বুদ্ধিজীবীরা কেবল অতীতের কোনো অধ্যায় নন; তারা আমাদের বিবেক, সাহস এবং নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের প্রেরণা। শহীদদের স্মৃতির সামনে মাথা নত করে অংশগ্রহণকারীরা দৃঢ় প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেন—প্রতিবাদের আলো কখনো নিভতে দেওয়া হবে না।

















