Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   বিজয়ের ডিসেম্বর: মুক্তির চেতনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য- ডা. আজিজ (পর্ব-২)

বিজয়ের ডিসেম্বর: মুক্তির চেতনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য- ডা. আজিজ (পর্ব-২)

বিজয়ের ডিসেম্বর: মুক্তির চেতনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য- ডা. আজিজ (পর্ব-২)

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের মৌলিক সাংবিধানিক নীতিমালা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পথে

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে এক দীর্ঘ ও কঠিন যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই স্বাধীনতার মূল প্রত্যাশা প্রতিষ্ঠিত ছিল চারটি মৌলিক সাংবিধানিক নীতির ওপর—
1. জাতীয়তাবাদ
2. গণতন্ত্র
3. ধর্মনিরপেক্ষতা
4. সমাজতন্ত্র
এই নীতিগুলো এলোমেলোভাবে গৃহীত হয়নি; এগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ, যার ভিত্তিতে বাঙালিরা পাকিস্তানের শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লড়াই করেছিল।
* জাতীয়তাবাদ: জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতার সংগ্রামে নিহিত। এটি বাঙালি জাতির শক্তি, ঐক্য এবং পরিচিতিকে গুরুত্ব দেয় এবং সার্বভৌমত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার যৌথ ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে।
* সমাজতন্ত্র: শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল সমাজতন্ত্রের মর্মবাণী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা বঞ্চনার পর সাম্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকেই এ নীতি উদ্ভূত হয়।
* গণতন্ত্র: গণতন্ত্র নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে তা প্রয়োগ হবে। এটি অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
* ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে এবং ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য নিষিদ্ধ করে। এটি রাষ্ট্রকে ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ রাখে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করে।


এই চারটি নীতি ছিল সমগ্র জাতির প্রত্যাশা, এবং এসব নীতির ভিত্তিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর এই চারটি সাংবিধানিক নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। সামরিক-সমর্থিত শাসন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন এসব নীতি ভেঙে দেয়, যার ফলে দেশের শাসনব্যবস্থায় এক বড় ধরনের আদর্শগত পরিবর্তন ঘটে।
১৯৭৫ সালের ঘটনাবলীর পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনো সম্পূর্ণভাবে এই নীতিগুলোকে সংবিধানে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলে স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল দেশ অর্জন করতে পারেনি। এই নীতিগুলোর পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে নানা ক্ষতির কারণ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
1. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
2. দুর্বল গণতন্ত্র
3. ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষয়
4. অর্থনৈতিক বৈষম্য
5. স্বৈরাচারের পুনরাবৃত্তি
আংশিক পুনঃপ্রতিষ্ঠা সত্ত্বেও এই সমস্যা আজও দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতাকে প্রভাবিত করে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে উগ্রপন্থী ইসলামি রাজনৈতিক দলের উত্থান ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ক্ষয়, সংখ্যালঘুদের অনিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মতো গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আর্থিক ক্ষমতা, সংগঠনগত শক্তি এবং ধর্মীয় প্রভাব—এসব ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্য শক্তি অর্জন করেছে। কিন্তু যদি এ ধরনের উগ্রপন্থী দল বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠে, তবে তা দেশের জন্য বহু মাত্রায় গভীর এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং জনগণের সতর্ক থাকা এবং সম্ভাব্য পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের মূল চেতনার ভিত্তি যে চারটি সাংবিধানিক নীতি—সেগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক শক্তিকে সংগঠিত করা এখন সময়ের দাবি।

ডা. আজিজ, লং আইল্যান্ড