কালী মন্দিরের জায়গা থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি লুট বাংলাদেশের কুমিল্লায়
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের কুমিল্লায় মুরাদনগরে শুধুমাত্র অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমেই প্রতিবছর প্রায় ৫০০ একর কৃষি জমির মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রতিটিতেই গড়ে প্রায় ৫টি করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চলমান রয়েছে। কৃষি জমি রক্ষায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন প্রতিরোধে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও, অভিযানের ২ ঘণ্টার মধ্যেই আবারও সক্রিয় হয়ে যায় মাটি কাটার সিন্ডিকেট। বসানো হয় নতুন মেশিন আবারো পুরোদমে মাটি উত্তোলন করা হয় কৃষি জমি থেকে। ফলে ধ্বংসের মুখে এখন উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলের কৃষি জমি।
অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের ক্ষমতার দৌরাত্ম এতই বেশি যে কৃষি জমির পাশাপাশি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জায়গা। স্থানীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। গত কয়েকদিন যাবত অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের বি-চাপিতলা বিলের ব্রাহ্মণ চাপিতলা মৌজার শ্রী শ্রী দক্ষিণা কালীমাতা মন্দিরের ২৯৭৮ দাগের ২ একর ৫৪ শতক জমির মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বি-চাপিতলা গ্রামের তাইজুদ্দিন কালী মন্দিরের ২ একর ৫৪ শতক জায়গা দখল করে একই গ্রামের আহমেদ মিয়ার কাছে প্রতি ফুট মাটি ৫ টাকা ধরে বিক্রি করেছে। আর সেই মাটি জসীম উদ্দীন অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে কালী মন্দিরের জায়গা থেকে উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে। তাইজুদ্দিন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় সে সকলের বাধা উপেক্ষা করেই কালী মন্দিরের জায়গা থেকে মাটি উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ড্রেজার ব্যবসায়ী জসীম উদ্দীন বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল ওই জমি থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে দেয়া। এখন শুনলাম ওই জমিটা নাকি কালী মন্দিরের তাই ভাবছি ড্রেজার বন্ধ করে দিব। জায়গাটি কালী মন্দিরের এ বিষয়টি নিশ্চিত করে আহমেদ মিয়া বলেন, আমি ৫ টাকা ধরে প্রতি ফুট মাটি ক্রয় করেছি তাইজুদ্দিন সাহেবের কাছ থেকে। তিনি আমাকে বলেছেন এটা তার পৈতৃক সম্পত্তি। এখন শুনছি এটা নাকি কালী মন্দিরের জায়গা তাই আপাতত মাটি উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।
তবে অভিযুক্ত তাইজুদ্দিন বলেন, এই জায়গাটি তার বাবা প্রায় ৪০ বছর আগে ক্রয় করেছে মন্দিরের স্বত্বাধিকারীদের কাছ থেকে। ভুলবশত তাদের নামে রেকর্ড হয়নি। বাংলাদেশ জরিপে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে শ্রী শ্রী দক্ষিণা কালীমাতা মন্দিরের নামে।
যদি জমি ক্রয়ের দলিল থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে খতিয়ানের রেকর্ড সংশোধন ছাড়া জমির মাটি কি আপনি বিক্রি করতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত তাইজুদ্দিন বলেন, জমি দখল করে রেখেছি বহুদিন হয়। এতদিন কেউ কোন প্রশ্ন তোলেনি। যখনই জমি থেকে মাটি বিক্রি করেছি, তখনই অনেকের অনেক প্রশ্ন। সকলের যেহেতু এতই সমস্যা তাই আমি মাটি বিক্রয় বন্ধ করে দিব।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। আর এটা তো কালী মন্দিরের জায়গা। এখান থেকে কোন উপায়ে মাটি উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মূলত, পুরো উপজেলায় মাটি-ভরাটের চাহিদা অনেক বেশি, ফলে অভিযান পরিচালনা করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা যখনই যেখান থেকে অবৈধ ড্রেজারের বিষয়ে তথ্য পাই। তখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছি। কৃষকরা সচেতন হলে এই সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে। সূত্র: মানবকণ্ঠ

















