দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা- প্রতীক উপাসনার একটি বিশেষ রূপ: ড. মধুসূদন কৃষ্ণ দাস
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
সনাতন ধর্মে পূজা মূলত প্রতীক-উপাসনার মাধ্যমে হয়ে থাকে। প্রতিমা, ঘট কিংবা চিত্রপট—সবই মানুষের কল্পিত দেবত্ব আরোপের মাধ্যমে পূজ্য হয়ে ওঠে। একইভাবে দুর্গাপূজার অন্যতম অঙ্গ কুমারী পূজাও একটি প্রতীক-উপাসনা। জীবন্ত কুমারী বালিকাকে দুর্গা বা শক্তিদেবীর প্রতীকরূপে পূজা করা হয়। পূজার আসনে সমাসীনা হওয়ার পর তিনি আর সাধারণ পার্থিব কন্যা নন, দেবীস্বরূপা হয়ে ওঠেন।
তন্ত্রশাস্ত্র, পুরাণ ও আচারগ্রন্থে কুমারী পূজার বিশেষ উল্লেখ রয়েছে।
মহাচীনতন্ত্রে বলা হয়েছে—অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবস্যা কিংবা রবিবারে সংক্রান্তি হলে সামর্থ্য অনুযায়ী কুমারী পূজা শ্রেয়।
ভবিষ্যপুরাণে নবমী তিথিতে কুমারী পূজার নিদান পাওয়া যায়। নির্বাচিত কুমারীকে সজ্জিত করে দেবীজ্ঞানে পূজা করার মাধ্যমে দুর্গাকে সন্তুষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছেন ।
তন্ত্রসারে বলা হয়েছে—“হোমাদিকং হি সকলং কুমারী পূজনাং বিনা।
পরিপূর্ণ ফলং নস্যাৎ পূজয়া তদ্ ভবেদ ধ্রুবম্।।“
অর্থাৎ কুমারী পূজা ব্যতীত হোমাদি সব ক্রিয়াই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কুমারী পূজার মাধ্যমেই পূজার ফল বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
অন্নদাকল্প তন্ত্রে এক থেকে ষোলো বছর বয়সী কুমারীদের দেবীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে—
১ বছর : সন্ধ্যা , ২ বছর : সরস্বতী,
৩ বছর : ত্রিমূর্তি , ৪ বছর : কালিকা ,৫ বছর : সুতপা , ৬ বছর : উমা,
৭ বছর : মালিনী , ৮ বছর : কুঞ্জিকা,
৯ বছর : কলিসঙ্গমা , ১০ বছর : অপরাজিতা , ১১ বছর : রুদ্রাণী , ১২ বছর : ভৈরবী , ১৩ বছর : মহালক্ষ্মী , ১৪ বছর : পীঠনায়িকা , ১৫ বছর : ক্ষেত্রজ্ঞা , ১৬ বছর : অন্নদা (মতে অম্বিকা) ।
কৈশোরে (পুষ্পদর্শন হওয়ার পর) কুমারী আর পূজার যোগ্য থাকে না।
কুমারী পূজায় প্রদত্ত একটি পুষ্পও অমূল্য ফল দেয়।কুমারীকে ভোজন করানো হলে তা ত্রিলোক ভোজনের সমান পূণ্যফল দেয়।যামলতন্ত্রে বলা হয়েছে—অসুর, দুষ্টগ্রহ, ভূতপ্রেত, এমনকি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরও কুমারী পূজায় সন্তুষ্ট হন।
কুমারীকে আসনে বসিয়ে দেবীজ্ঞানে পূজা করতে হয় ।পাদ্য, অর্ঘ্য, ধূপ, চন্দন, কুঙ্কুম প্রভৃতি উপাচার নিবেদন করতে হয়।
অন্তত তিনবার প্রদক্ষিণ করার পর কুমারীকে ভোজন করাতে হয়। পূজা শেষে দক্ষিণা প্রদানের বিধানও শাস্ত্রে রয়েছে। কুমারীর প্রতি অসম্মান গুরুতর অপরাধ হিসেবে
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কুমারী পূজার জন্য যেকোন জাতির কন্যাকে নির্বাচন করা যায়। তবে সম্ভব হলে সুন্দর, সুলক্ষণা ও সদাচারিণী কন্যা হলে শ্রেয়।
দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা অপরিহার্য নয়, তবে করলে পূজার ফল বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং দুর্গাদেবী বিশেষভাবে সন্তুষ্ট হন। এজন্য কুমারী পূজা দুর্গাপূজার একটি পরিপূরক ও মহিমান্বিত অঙ্গ হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে।

















