Logo

রাজনীতি    >>   নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলেও ‘দেশ সেবার’ রূপরেখা দিলেন শেখ হাসিনা: বিজয় দিবসের ভাষণে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ঘোষণা

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলেও ‘দেশ সেবার’ রূপরেখা দিলেন শেখ হাসিনা: বিজয় দিবসের ভাষণে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ঘোষণা

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলেও ‘দেশ সেবার’ রূপরেখা দিলেন শেখ হাসিনা: বিজয় দিবসের ভাষণে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ঘোষণা

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক :

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না—এমন রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে ফের দেশ সেবার সুযোগ পেলে কীভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চান, তা স্পষ্ট করে জানালেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার গভীর রাতে দলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এক দীর্ঘ ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যদি আবার তাকে দেশ সেবার সুযোগ দেয়, তবে তিনি অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশকে আবারও স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পথে ফিরিয়ে আনবেন। আওয়ামী লীগের দাবি, দলের কোটির বেশি নেতা-কর্মী ও সমর্থক এই ভাষণ সরাসরি শুনেছেন। বুধবার সকাল থেকে ভাষণের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাইরে থাকছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজয় দিবসের ভাষণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা কার্যত একটি ‘নৈতিক ও নীতিগত নির্বাচনী ইস্তাহার’ তুলে ধরেছেন। তিনি সরাসরি ভোট বয়কটের আহ্বান জানাননি, আবার ভোটে অংশ নেওয়ার নির্দেশনাও দেননি। বরং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে কী করবেন, তার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরে দল ও সমর্থকদের রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক রাখার কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভাষণে শেখ হাসিনা তার শাসনামলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন তথ্য ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ ২৩৩ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, যেখানে দলটি প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ৮ মাস ক্ষমতায় থাকাকালে তার সরকার বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় আমূল পরিবর্তন এনেছে। তিনি উল্লেখ করেন, একসময় দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর, যা বেড়ে ৭৩ বছরে পৌঁছেছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ শতাংশ। নবজাতক মৃত্যুহার হাজারে ৮৪ থেকে কমে ২১-এ নেমে এসেছে। প্রসবকালে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি এক লাখে ৩৭০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৬-এ। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ৪১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। তার সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ।
শেখ হাসিনা ভাষণে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা চালুর কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার তার সরকারের সময় চালু করা বহু সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি দাবি করেন, শত শত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরাও সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এসব ঘটনাকে তিনি একটি ‘পরিকল্পিত নকশার’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ভাষণের শেষাংশে দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যদি আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই, তাহলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে নৈরাজ্য ও সহিংসতা থেকে মুক্ত করব।” তিনি জানান, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে তার সরকারের অগ্রাধিকার। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে বেকার যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেওয়াকে তিনি ভবিষ্যৎ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও শেখ হাসিনার এই ভাষণ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও সমর্থকভিত্তিকে সক্রিয় ও সংগঠিত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র : হাকিকুল ইসলাম খোকন।