Logo

আন্তর্জাতিক    >>   ডোনাল্ড ট্রাম্প কি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি  তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন?

Progga News Desk:

ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় মেয়াদে ও হতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । বিষয়টি নিয়ে তিনি  ‘মশকরা’ করছেন না সেটাও স্পষ্ট  জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। যদিও মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না। তারপরও ট্রাম্পের সমর্থকেরা বলছেন, ট্রাম্পের তৃতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসের গদিতে বসার পথ থাকতে পারে।

তৃতীয় মেয়াদ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য-

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এক সাক্ষাৎকারে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ট্রাম্পের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কিছু উপায় আছে, যেগুলো কাজে লাগিয়ে এটা করা যেতে পারে।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আমি মোটেই মশকরা করছি না।অনেক মানুষই আছেন যারা চান আমি এটা করি। তবে আমি তাঁদের বলেছি, আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প। এবারের মেয়াদ শেষে তাঁর বয়স হবে ৮২ বছর। সাক্ষাৎকারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি দেশের ‘সবচেয়ে কঠিন পদে দায়িত্ব পালন’ করে যেতে চান কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি কাজ করতে পছন্দ করেন।

তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়া নিয়ে ট্রাম্প এই প্রথম কথা বললেন না। গত জানুয়ারিতে সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, একবার নয়—দুই, তিন বা চারবারের মতো (প্রেসিডেন্ট পদে থেকে দেশের) সেবা করা আমার জীবনের সবচেয়ে সম্মানজনক কাজ হবে।

যদিও সে সময় তিনি বলেছিলেন, এটি ছিল ‘ভুয়া গণমাধ্যমের জন্য’ তাঁর একটি রসিকতা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে-

আপাতদৃষ্টে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। দেশটির সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে দুবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না।

এখন ট্রাম্প যদি সংবিধানে পরিবর্তন আনতে চান তাহলে তাঁকে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন পেতে হবে। একই সঙ্গে এ কাজের জন্য অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের সরকারগুলো থেকে তিন-চতুর্থাংশ অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে ।

গত ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর কংগ্রেসের দুই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ এখন ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির হাতে। তবে সেখানে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের  নেই । আর অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের ৫০টি আইনসভার ১৮টি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।তাহলে কীভাবে ট্রাম্প তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবেন?

ট্রাম্পের সমর্থকেরা বলছেন, তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মার্কিন সংবিধানে একটি ফাঁক রয়েছে। তাঁদের যুক্তি হলো—২২তম সংশোধনীতে শুধু বলা হয়েছে যে দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচিত’ হতে পারবেন না। তবে শূন্য পদ পূরণের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ২০২৮ সালের নির্বাচনে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তাঁরা যদি বিজয়ী হন, তখন জেডি ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই পদত্যাগ করবেন। আর পরবর্তী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্টের শূন্য পদ পূরণ করতে পারবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

 বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স

                                    বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ট্রাম্প আবার নির্বাচনে দাঁড়াবেন ও জয় পাবেন। আর প্রতিনিধি পরিষদে টেনেসি অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সদস্য অ্যান্ডি অগলেস গত জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন। তাতে কোনো ব্যক্তির তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়েছিল।

 

আইনজ্ঞরা যা বলছেন-

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের অধ্যাপক ড্রেক মুলার বলেন, মার্কিন সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হন, তাহলে তিনি একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্যও অযোগ্য হবেন।

অর্থাৎ ড্রেক মুলারের মতে, কেউ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকলে তিনি আর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। এই অধ্যাপক বলেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কোনো “কৌশল” আছে বলে তিনি মনে করেন না।

আর ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনবিষয়ক অধ্যাপক জেরেমি পল সিবিএস নিউজকে বলেন, প্রেসিডেন্টের তৃতীয় মেয়াদের পক্ষে ‘বিশ্বাসযোগ্য কোনো আইনি যুক্তি’ নেই।

 

আগে কি কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট ছিলেন?

যুক্তরাষ্ট্রের চারবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে নিজের চতুর্থ মেয়াদের তিন মাসের মাথায় তাঁর মৃত্যু হয়। রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। এই সমস্যাগুলোকে প্রায়ই তাঁর দুয়ের বেশি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

                                                            ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট

এ ছাড়া সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না হওয়ার বিষয়ে কিছু লেখা ছিল না। তবে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না হওয়াটা তখন একটি প্রথা ছিল। ১৭৯৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটন তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ওই প্রথা চলে আসছিল।

ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বছরের ওই প্রথা ভাঙার পর ১৯৫১ সালে সংবিধানে ২২তম সংশোধনী এনে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।