
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে গ্রেফতার ধর্ম ব্যবসায়ী দিনেশ মজুমদার : প্রতারণা, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও পূজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাঞ্চল্য
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
প্রবাসী সমাজে আলোচিত-সমালোচিত নাম দিনেশ মজুমদার। বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়ম, সাম্প্রদায়িক উসকানি এবং অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১টা ৫৫ মিনিটে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের টাইমস স্কয়ারে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এ সময় বাদী শক্তি গোপ্তার সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যক্তিগত আড্ডায় দিনেশ মজুমদার প্রায়ই সনাতনী সম্প্রদায়কে নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষদের বিরুদ্ধেও তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, যার ফলে প্রবাসী সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতারণার নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। সূত্র জানায়, ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিতাইকে আর্থিকভাবে ঠকানো থেকে শুরু করে দোকান ভাড়া না দেওয়া, এমনকি করোনা মহামারির সময় নেওয়া সরকারি ঋণও যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না— সে প্রশ্নও উঠেছে বা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মীয় উৎসবকেও ব্যবসার হাতিয়ার বানান দিনেশ। গত বছরের দুর্গোৎসবে টিকেট বিক্রির নামে প্রায় ১১ হাজার ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। পূজা আয়োজক কমিটির বৈঠকেও তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল।
এছাড়া শিল্পীদের নাম ভাঙিয়ে অর্থ আদায়, পূজার মূর্তি কেনার নামে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া, এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পূজা উদ্বোধন করবেন— এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
নিউইয়র্কের সাংবাদিক শিতাংশু গুহর স্ত্রী আলপনা গুহ অভিযোগ করে বলেন, “দিনেশ মজুমদার ২০২৪ সালের দুর্গাপূজার মূর্তি কেনার কথা বলে আমার কাছে ৫ হাজার ডলার নিয়েছিল। কিন্তু মিথ্যা আশ্বাস দিয়েই সময় পার করেছে, টাকা ফেরত দেয়নি।”
অন্যদিকে জয়দেব শিলের স্ত্রী জানান, “গত ২০২৩ সালের দূর্গাৎসব ও পূজার সামগ্রী বিক্রির টাকা থেকেও প্রায় ১৪০০ ডলার এখনো ফেরত দেননি দিনেশ।”
বাদী শক্তি গোপ্তা জানান, “আমি পূজার বিরোধিতা করিনি। বরং কুইনসের ডাইভারসিটি প্লাজায় তাঁর ক্লাবের পূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যখন টাইমস স্কয়ারে দুর্গামূর্তি নামানো হয়, তখনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।”
তিনি আরও বলেন, “দিনেশ মজুমদার শুধু প্রতারকই নন, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করারও অপচেষ্টা করেছেন। তাঁর সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন নিয়েও মামলা করা হবে। মানুষের কাছ থেকে টিকিট কেটে যে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেটিও এখন ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছে।”
প্রবাসী সমাজের অনেকেই দিনেশ মজুমদারের গ্রেফতারকে “সত্যের বিজয়” হিসেবে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, একজন ধর্ম ব্যবসায়ী ও প্রতারককে আইনের আওতায় আনা হলো— যা ভবিষ্যতে প্রবাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং অসাধু কর্মকাণ্ড ঠেকাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ উপলক্ষে ১০ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার বিকেল ৫টায় গুলশান ট্রেরেসে দুর্গাপূজা মণ্ডপের সামনে সনাতনী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মিষ্টি বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।