
তামিম ইকবালসহ বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন যারা?
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম ইকবাল। আজ বুধবার (১অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।
বিসিবি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৬ অক্টোবর। আর তার আগে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আজ ১ অক্টোবর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেই তামিম সরে দাঁড়ালেন হঠাৎ করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যে ১৫ ক্লাবের ওপর আবার কোর্টের নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তার সবকটাই বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরদের। খুব স্বাভাবিকভাবেই ১৫টি নিশ্চিত ভোট হাতছাড়া হয়ে যাবে তামিমের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থি প্যানেলের।
এছাড়া শেষমুহূর্তে অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে সাজানো ১২ জনের প্যানেল থেকেও নির্বাচন করতে পারবেন না চার জন প্রার্থী। এতে করে শক্তি কমে যাওয়ার উপক্রম হয় অনেকটাই। ফলে আগেরদিনই গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, বিএনপিপন্থিরাসহ তামিম ইকবাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন আর অবশেষে সেটাই হলো।
সকাল ১০টা নাগাদ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম অফিসে আসেন হতাশ ও ক্ষুব্ধ তামিম ইকবাল। এমনিতে মিডিয়াবান্ধব তামিম। তবে আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে খুব কম কথা বলেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তামিম প্রথমেই বলেন, ‘আজকে ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তামিম বলেন, ‘আপনারা ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করতে চান, কিন্তু আগে বিসিবির ফিক্সিং বন্ধ করেন।’
এবারের বিসিবি নির্বাচন ঘিরে যা হয়েছে, তাকে অসুন্দর, চরম স্বেচ্ছাচারিতা এবং রীতিমতো নোংরামি বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তামিমের ভাষায়, ‘এর চেয়ে অসুন্দর আর কিছু হতে পারে না, যা ইচ্ছা তাই করা হচ্ছে। এটা সুন্দর প্রক্রিয়া হতে পারে না।’
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠিকঠাক নেই, স্বচ্ছ হচ্ছে না বলে দাবি করছেন। তারপরও আপনারা তা জেনে ও মেনেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ছিলেন। তাহলে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা কেন?
তামিম ইকবালের ব্যাখ্যা, ‘স্বেচ্ছাচারিতা আর নোংরামির প্রতিবাদ হিসেবেই মনোনয়ন প্রত্যাহার আমাদের।’ তার শেষ কথা, ‘এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে রইলো।’ তামিমের মতো পরিচালক পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাঈদ ইব্রাহিম আহমেদ, ইসরাফিল খসরু, সৈয়দ বোরহানুল ইসলাম এবং রফিকুল ইসলাম বাবুর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরাও।
শেষ মুহূর্তে হাইকোর্টে রিটে ১৫ ক্লাবের ওপর এসেছে নিষেধাজ্ঞা। তাতে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থি প্যানেলের প্রার্থী কমে গেছে চারজন। তাদের প্যানেল ভোটও কমেছে ১৫ জন। এমতাবস্থায় প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোই উত্তম।
আগের রাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন তামিম ইকবালসহ তার প্যানেলের বেশিরভাগ সদস্য। মঙ্গলবার রাত গভীর হতেই শোনা যায়, তামিমসহ বিএনপিপন্থিদের বড় অংশ নির্বাচন বয়কট করতে যাচ্ছে।মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত গুলশানের একটি হোটেল ও কফিশপে দুই দফা বৈঠক শেষেই মূলত নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। জানা গেছে, সেখানে বিএনপিপন্থি প্যানেলের শীর্ষ নেতা তামিম ইকবাল নিজে নির্বাচন না করার কথা বলেন।
পাশাপাশি তামিমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের রফিকুল ইসলাম বাবু, মাসুদুজ্জামান বিএনপির চার নেতার ছেলে ইসরাফিল খসরু, সাইদ ইব্রাহিম আহমেদ, ইয়াসির আব্বাস এবং ওমর শরীফ মোহাম্মদ ইমরান, ক্যাটাগরি ‘১’ থেকে সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর, বোরহান হোসেন পাপ্পু এবং সাব্বির রুবেলসহ সব মিলে প্রায় ৮-১০ জন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
আজ (১ অক্টোবর) ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বুধবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়। সকাল ১০টার পরপরই তামিম ইকবাল দলবলসহ বিসিবি অফিসে পৌঁছান এবং বেলা ১১টা নাগাদ একে একে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে শুরু করেন।
তামিমসহ তার প্যানেলের একটা বড় অংশ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিলেও এই প্যানেলের সবাই যে নির্বাচন বয়কট করেন, তা নয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিপন্থি প্যাানেলের মধ্যে যারা বিএনপির সঙ্গে দলীয়ভাবে সম্পৃক্ত, তারা সবাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশেই বিএনপিপন্থি প্রার্থীরা একে একে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। সূত্র জানায়, ১৫ ক্লাবের ওপর হাইকোর্টের রিটের পর পরিস্থিতি ঘোলা হতে থাকে। তাতে তামিম ইকবাল নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থিদের ১৫টি প্যানেল ভোট কমে যায়। ১২ জনের প্যানেল থেকে চারজন প্রার্থীও যায় কমে। এরকম অবস্থায় নির্বাচন করায় থাকবে রাজ্যের ঝুঁকি।
কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলে জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইও শেষ। আজ ১ অক্টোবর সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়। দুপুরের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এক কথায় সব তৈরি। এরকম অবস্থায় ১৫ ক্লাবের ওপর নতুন করে রিট করে নিষেধাজ্ঞা আনা মানে সাজানো নির্বাচন কার্যক্রম হ-য-ব-র-ল করে ফেলা। সেই নির্বাচন করার চেয়ে না করাই ভালো। এমন যুক্তি দেখিয়ে আসলে তামিমের গ্রুপ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করছে।
তবে কাগজে-কলমে বিএনপি করেন না, সরাসরি পারিবারিকভাবে এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন কেউ কেউ নির্বাচন করতে পারেন। সেই তালিকায় ফাহিম সিনহা, ইফতিখার রহমান মিঠু, শানিয়ান তানিম, ইশতিয়াক সাদেক ও মঞ্জুরুল আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা নাকি নির্বাচন করবেন।
মাহবুব আনাম পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ার পর তামিমপন্থি প্যানেলের মূল কো-অর্ডিনেটরই হচ্ছেন বিসিবির সাবেক শীর্ষ কর্তা এবং একমি ল্যাবরেটরিজের অন্যতম স্বত্বাধিকারী আফজালুর রহমান সিনহার ছেলে ফাহিম সিনহা শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছেন। খবর জাগোনিউজের।
ফাহিম সিনহা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন কি না, সেটিই ছিল দেখার। কেননা ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে তামিমপন্থিদের যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনিই।
প্রত্যাহার তালিকা:-
১. তামিম ইকবাল (ওল্ডডিওএইচএস)
২. রফিকুল ইসলাম বাবু (ইন্দিরা ক্রীড়াচক্র)
৩. মাসুদুজ্জামান (মোহামেডান)
৪. সাঈদ ইব্রাহিম আহমেদ (ফেয়ার ফাইটার্স)
৫. মীর হেলাল (চট্টগ্রাম জেলা)
৬. সৈয়দ বুরহান হোসেন পাপ্পু (তেজগাঁও ক্রিকেট একাডেমি)
৭. ইসরাফিল খশরু (এক্সিউম ক্রিকেটার্স)
৮. সাব্বির আহমেদ রুবেল (প্রগতি সেবা সংঘ)
৯. তৌহিদ তারেক (পাবনা)
১০. আসিফ রাব্বানী (শাইনপুকুর)
১১. সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর (ক্যাটাগরি-৩)
১২. ইয়াসির আব্বাস (আজাদ স্পোর্টিং)
১৩. ফাহিম সিনহা (সূর্যতরুণ ক্লাব)।