Logo

আন্তর্জাতিক    >>   নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনা: ইতিহাস, সংগ্রাম ও অগ্রগতির এক প্রতীক

নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনা: ইতিহাস, সংগ্রাম ও অগ্রগতির এক প্রতীক

নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনা: ইতিহাস, সংগ্রাম ও অগ্রগতির এক প্রতীক

নয়ন বিশ্বাস রকি, প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সেই ঐতিহাসিক ছবিটি আমাদের চেতনাকে আজও নাড়া দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন, আর বারান্দায় রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর কন্যা—আজকের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দৃশ্যটি যেন একটি যুগের সূচনা, এক সংগ্রামী নারীর রাজনীতিতে পথচলার প্রথম আলোকচিত্র।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা। এক প্রাণবন্ত, আদর-ভালবাসায় পরিপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে বড় হওয়া এই নারী, আজ এক জাতির প্রত্যয়, এক ইতিহাসের ধারক।

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী নিষ্ঠুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা প্রবাস জীবন ত্যাগ করে ফিরে আসেন নিজের মাটি—বাংলাদেশে। তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর এক অসাধারণ সংগ্রামী যাত্রা। লক্ষ্য একটাই—বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া। দেশপ্রেম, ত্যাগ ও অবিচল সাহসের মূর্ত প্রতীক শেখ হাসিনা দেশের নেতৃত্বে এনেছেন দৃঢ়তা, উন্নয়ন এবং মানবিকতা।

সামরিক শাসকদের শোষণ, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের নির্মমতা, পরিবার হারানোর শোক—সব পেছনে ফেলে শেখ হাসিনা এগিয়ে গেছেন নিরন্তর। বিচার চাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকেও তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দমে যাননি। বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, ১৯ বার তাঁর ওপর হামলার পরও বাংলার মাটিতে অটল থেকেছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা ছিল এই রাজনীতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। লক্ষ্য ছিল একটি মানুষকে হত্যা করা—যিনি জনগণের নেত্রী, যিনি দেশের জন্য, মানুষের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গৃহহীন মানুষ ঘর পেয়েছে, শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, সর্বজনীন শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন হয়েছে। এক সময়ের প্রত্যন্ত মংলা পীড়িত কুড়িগ্রামে আজ হাসিমুখে মানুষ বলে—“শেখের বেটি আমাদের ১০ টাকায় চাল দিচ্ছে।”

১৬ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক সেবাদান করছে প্রতিদিন, বিদ্যুৎ পৌঁছেছে দেশের ৭০ শতাংশ অঞ্চলে। পদ্মা সেতুর মতো শত প্রতিকূলতার মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি একটি মহাকাব্য আজকের বাস্তবতা।

শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক শেখ হাসিনা। তিনি হাসপাতালে ছুটে যান অসুস্থ কবিকে দেখতে, আবার গ্রামের স্কুলছাত্রের পত্রের উত্তর দেন নিজের হাতে। তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সবার। শীর্ষেন্দুর পত্রে আশ্বাস দেন—পায়রা নদীর ওপর সেতু হবে।

বাংলাদেশ আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেখানে শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজও তাঁর নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় একটি অপশক্তি। এক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে তাঁর জীবননাশের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে ও জনগণের ভালোবাসায় তিনি বেঁচে গেছেন।

এখন সময় এসেছে আত্মসমালোচনার, শেখ হাসিনার আদর্শে দলীয় শুদ্ধি অভিযানের। স্বজনপ্রীতি পরিহার করে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। উন্নয়নের ধারা রক্ষা করতে হলে রাজনীতিকে জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে, বিভাজন নয়—ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

মিথ্যা মামলা, হামলা দিয়ে দেশপ্রেমিকদের থামিয়ে রাখা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম কখনো মাথা নত করেনি, করবেও না।

তাই বলি, ঘুমিয়ে থেকো না বাঙালি। সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। দেশকে রক্ষা করো হায়নার হাত থেকে। স্বাধীনতার বাংলাদেশ হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তব রূপ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

নয়ন বিশ্বাস রকি

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ,কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক