নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি — সবার মেয়র, কেবল ধর্ম নয় ঐক্যের প্রতীক
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক, নিউইয়র্ক, ৭ নভেম্বর ২০২৫:
নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে ঘিরে নির্বাচনের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে “মুসলিম মেয়র” শিরোনাম ভাইরাল হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো—মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ মুসলিম ভোটারের শহর নিউইয়র্কে মামদানি জয়ী হয়েছেন সকল ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ সমর্থনে।
রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট — তিনি একজন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট, সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী একজন তরুণ নেতা। নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে তাঁর অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি—তিনি গেছেন হিন্দু মন্দিরে, খ্রিস্টান চার্চে, বৌদ্ধ মন্দিরে এবং মুসলিম মসজিদেও; কথা বলেছেন সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে, নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন একজন প্রার্থীকে “মুসলিম মেয়র” আখ্যা দেওয়া শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং বহুজাতি ও বহুধর্মীয় নিউইয়র্ক সিটির ঐক্যের চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করে। নিউইয়র্কের ইতিহাসে মেয়র মানেই শহরের সকল মানুষের প্রতিনিধি—কোনো একটি ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর নয়।
জোহরান মামদানির পারিবারিক প্রেক্ষাপটও বহুধর্মীয় ও মানবিক। বাবা শিয়া মুসলমান, মা ভারতীয় পাঞ্জাবি হিন্দু মীরা নায়ার, স্ত্রী খ্রিস্টান। মীরা নায়ার ভারতের উড়িষ্যায় বেড়ে উঠেছেন, বর্তমানে বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। মামদানির পরিবারেই মিশে আছে তিনটি ধর্ম, তিনটি সংস্কৃতি—যা তাঁর জীবনের মূল দর্শনকে গড়ে তুলেছে সহনশীলতা, মানবতা ও উদারচিন্তার ভিত্তিতে।
তবু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ ও প্রবাসের কিছু গণমাধ্যমে তাঁকে কেবল “মুসলিম মেয়র” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অনেকেই দেখছেন ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে। নিউইয়র্কে যেখানে মানুষ ধর্ম নয়, কাজ ও নেতৃত্বের ভিত্তিতে নেতাকে মূল্যায়ন করে, সেখানে এই ধর্মভিত্তিক ট্যাগিং শহরের উদার ভাবমূর্তির পরিপন্থী।
জোহরান ও তাঁর পরিবার নিজের জীবনযাপনে ধর্মীয় খাবার বিধিনিষেধ মানেন না; তাঁরা বিশ্বাস করেন মানবতাই সর্বোচ্চ ধর্ম। তাই পিতার মুসলমান পরিচয় টেনে এনে সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে “ধর্মীয় প্রতীকে” পরিণত করা একধরনের সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন প্রচারণা নিউইয়র্কের মতো উদার সমাজে অনাবশ্যক জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনের বীজ বপন করতে পারে।
সবশেষে প্রশ্ন একটাই—যে শহরের মানুষ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে, যে শহর সমতার ও প্রগতির প্রতীক, সেখানে নতুন মেয়রকে কেন “মুসলিম” নয়, “নিউইয়র্কের মেয়র”—অর্থাৎ সবার মেয়র হিসেবে দেখা হবে না?
নিউইয়র্ক এখন তাকিয়ে আছে জোহরান মামদানির প্রতিশ্রুতির দিকে—তিনি কীভাবে প্রগ্রেসিভ সমাজতান্ত্রিক নীতিতে, মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে শহরটিকে আরও মানবিক ও সমৃদ্ধ নগরে পরিণত করেন, সেটিই দেখার বিষয়।

















