৪৩তম বিসিএসে ২৬৭জন বাদ পড়েছেন, যা বললেন সারজিস
- By Jamini Roy --
- 04 January, 2025
৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বাদ পড়েছেন মোট ২৬৭ জন প্রার্থী। পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে এই বাদ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে উঠেছে তীব্র সমালোচনা। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে সারজিস আলম একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, "৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভ্যারিফিকেশনে ১৬৮ জন বাদ পড়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭ জনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্টের কথা বলা হচ্ছে, যা পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এই পদ্ধতির ন্যায্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।"
সারজিস আলম বলেন, "কোনো চাকরিপ্রার্থী যদি প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় সফল হয় এবং তার কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকে, তবে তার পরিবার বা আত্মীয়ের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানসিদ্ধ অধিকার লঙ্ঘন করে।"
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, "যদি আমার কোনো আত্মীয়ের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আমাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে সেটা কতটা যৌক্তিক? একজন মেধাবী তরুণ তিন বছর অধ্যবসায়ের পর সফল হলে কেন তাকে স্থানীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হতে হবে?"
সারজিস অভিযোগ করেন, ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তিনি লিখেন, "একজন সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী ওয়ার্ড সভাপতি বা সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবেন কেন? তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা কীভাবে এমন স্থানীয় নেতাদের হাতে চলে আসে?"
তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, "আমার পরিচিত এক ব্যক্তি, যিনি এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ছিলেন, প্রথম ধাপে উতরে গেলেও দ্বিতীয় ভ্যারিফিকেশনে বাদ পড়েছেন। তার কোনো অপরাধমূলক সংশ্লিষ্টতা ছিল না, কিন্তু তাকে শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছে।"
সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের বাদ পড়া নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। তবে সারজিস আলম বলেন, "যারা এই চাকরির ওপর নির্ভর করে তাদের জীবনে এ ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করা ন্যায়সংগত নয়। মেধাবীদের এমন অভিজ্ঞতা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সরকারি চাকরির ওপর আস্থা হারাবে।"
তিনি আরও বলেন, "মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক বা অপ্রাসঙ্গিক কারণ দেখিয়ে এ অধিকার খর্ব করা কখনোই উচিত নয়। এমন প্রক্রিয়া দেশের তরুণ সমাজকে হতাশ করে এবং বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করতে বাধ্য করে।"
৪৩তম বিসিএসের ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং স্বচ্ছতার প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভ্যারিফিকেশন প্রক্রিয়া যদি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে সম্পন্ন করা যেত, তবে চাকরিপ্রার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হতো না। এখন এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।