Logo

আন্তর্জাতিক    >>   ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা: রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন?

ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা: রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন?

ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা: রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন?

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে খুব দ্রুততার সাথে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। এই ঘটনাপ্রবাহের সর্বশেষ সংযোজন হলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন সেই খবর। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২মে) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলেনাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে  জানান, প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। একইদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের 'বিতর্কিত উপদেষ্টাদের' সরানোর দাবি তোলে বিএনপি।

এর আগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভও করেছেন।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত ১৪ই মে থেকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে তা দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গিয়ে ঠেকে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে 'বিএনপির মুখপাত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করে পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপি'র এক শীর্ষ নেতা। এসবের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে চাওয়ার  গুঞ্জন শোনা গেছে। এই খবরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানাভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর নানা ঘটনার পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর দাবি জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি তুলেছিলাম আমরা।

সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার গতকালকের বক্তব্য আবারও নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। এরপর রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ পাঁচটি দলের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ গতকাল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে অপ্রত্যাশিতভাবে আসা বিভাজন মিটিয়ে ফেলতে হবে।তিনি লেখেন, আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশী-বিদেশী দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পায়তারা করবে। দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদেরকে এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই।

এদিকে, দেশের বর্তমান পরিস্থতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল জামায়াতের এক বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এই আহ্বান জানানো হয় বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গতকাল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লেখেন, বিএএল, নর্থ ও দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'নর্থ' বা 'উত্তর' বলতে সাধারণত: ক্যান্টনমেন্ট বোঝানো হয়। 'বিএএল' বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত রুপ।

 

তিনি আরও লেখেন, আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রুপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, পূর্বের যে কোনো বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের কারণে দুঃখপ্রকাশ করছেন তিনি।

 

মাহফুজ আলম লিখেছেন, ব্যক্তির আদর্শ, সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল- সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আর একদিনও সরকারে থাকলে অভ্যুত্থানের সকল শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন মাহফুজ আলম।খবর বিবিসির।

উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়াতে বেশ কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করছেন ইশরাক হোসেন ও তার সমর্থকরা।

মাহফুজ আলম ফেসবুকে লিখেছেন, পুরাতন বন্দোবস্তের বিভেদকামী শ্লোগান ও তকমাবাজি, যা বৃহত্তর জনগোষ্টীকে হত্যাযোগ্য করে তোলে, সেগুলো পরিহার করলেই আশা করি ভবিষ্যত রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। বাংলাদেশের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ ও আগ্রাসী। সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে বলেও উল্লেখ করেছেন মাহফুজ আলম। তিনি আরো লেখেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ঐক্যবদ্ধ থাকা জনগণের সামনে দীর্ঘ পরীক্ষা রয়েছে এবং এ পরীক্ষা ঐক্যের এবং ধৈর্যের। এ পরীক্ষা উতরে যেতেই হবে।