সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অঙ্গীকার জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের
- By Jamini Roy --
- 01 January, 2025
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার মেয়াদকালে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করতে না দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। রাজধানীর সেনা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎকারটি দেশটির প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোতে বুধবার (১ জানুয়ারি) প্রকাশিত হয়। এতে দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থন, এবং সংবিধানের সংস্কারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্টভাবে বলেন, “সেনাপ্রধান হিসেবে আমি আমার মেয়াদকালে সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে নাক গলাতে দেব না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদরাই, সেনাবাহিনী নয়।” তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আমাদের কাজ শেষ হলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই সেনানিবাসে ফিরে যাব।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন মাঠে থাকার ঝুঁকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের ১/১১-এর অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। দীর্ঘদিন মাঠে থাকার কারণে সেনা সদস্যদের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও সংখ্যাটা কম, তবে এমন ঘটনা আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের প্রশিক্ষণ রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য নয়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করছি। তারা যেভাবে আমাদের সাহায্য চায়, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। সরকার যখন বলবে, আমাদের দায়িত্ব শেষ, তখন আমরা সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।”
নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাজনীতিবিদদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে সংকট সমাধানের পথ পাওয়া সম্ভব। এটি একটি সংস্কৃতির বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর একত্রে বসার মাধ্যমে একটি কার্যকর সমঝোতা সম্ভব।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই। তবে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। এটি শাসনব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে পারে।”
তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখার প্রস্তাব দেন এবং উল্লেখ করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে এটি দেশের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্রান্তিকাল মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, “আমি নৈরাশ্যবাদী নই। আমাদের রাজনীতিবিদরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব।”