বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার খবরের কেন্দ্রবিন্দুতে টিউলিপ সিদ্দিক
- By Jamini Roy --
- 04 January, 2025
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। লন্ডনের কিংস ক্রসের কাছে অবস্থিত এই ফ্ল্যাটটি তাকে হস্তান্তর করেন আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফ। তবে, ফ্ল্যাটের বিনিময়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০০৪ সালে বিনামূল্যে ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে, ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বর্তমান মূল্যে প্রায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা) দিয়ে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছিল। তবে, ফ্ল্যাটটির বর্তমান মূল্য উল্লেখ না করলেও একই ভবনের একটি ফ্ল্যাট গত বছর ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা) বিক্রি হয়েছে।
টিউলিপের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, টিউলিপের মা-বাবা একসময় আবদুল মোতালিফকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
টিউলিপের মুখপাত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এই খবরকে ভুল বলে দাবি করেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের ভোটার নিবন্ধন নথি থেকে জানা গেছে, কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটে ২০০০ সালের দিকে টিউলিপ ও তার ভাই-বোনেরা বসবাস করতেন। টিউলিপ পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দাখিল করা আর্থিক বিবরণীতে দুটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
এই ফ্ল্যাট দেওয়ার খবর এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, নয়টি প্রকল্পে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ অনিয়ম হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অভিযোগের পরও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের টিউলিপের ওপর আস্থা রয়েছে। লেবার পার্টি এই অভিযোগগুলোকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে।
ফ্ল্যাটটির মালিকানা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, আবদুল মোতালিফ স্বীকার করেছেন যে তিনি ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। তবে, পরবর্তীতে সেটি নিয়ে কী করেছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এছাড়া, ভোটার নিবন্ধন নথি থেকে জানা গেছে, মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন, যিনি একজন আওয়ামী লীগ এমপির সন্তান।
বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার এই খবর টিউলিপ সিদ্দিকের রাজনৈতিক জীবন এবং তার দায়িত্ব পালনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে, লেবার পার্টির পক্ষ থেকে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে আছেন। কিন্তু ফ্ল্যাটের মালিকানা, পারিবারিক সংযোগ, এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনা শুধু টিউলিপ সিদ্দিকের নয়, বরং দুই দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি এবং বাংলাদেশের রাজনীতির মধ্যে এই ধরনের সংযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বিশদ অনুসন্ধানের দাবি রাখে।