বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনায় বিশ্বে নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। সম্প্রতি কনসিস্ট অ্যাপারেল লিমিটেড নামে একটি কারখানা নতুন করে লিড (LEED) সনদ অর্জন করেছে। এর ফলে দেশের সবুজ কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৩টিতে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এ তথ্য জানিয়েছে।
লিড (Leadership in Energy and Environmental Design) হলো একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যা পরিবেশবান্ধব ভবন ও কারখানার জন্য প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (USGBC) এ সনদ প্রদান করে। লিড সনদ পেতে হলে একটি কারখানাকে ভবন নির্মাণ থেকে উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে পরিবেশ সুরক্ষার সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়।
লিড সনদের জন্য ৯টি শর্তের ভিত্তিতে সর্বমোট ১১০ পয়েন্ট থাকে। সনদের মান অনুযায়ী পয়েন্ট ভাগ করা হয়:
১. প্লাটিনাম রেটিং: ৮০ পয়েন্ট বা তার বেশি।
২. গোল্ড রেটিং: ৬০-৭৯ পয়েন্ট।
৩. সিলভার রেটিং: ৫০-৫৯ পয়েন্ট।
৪. সার্টিফায়েড রেটিং: ৪০-৪৯ পয়েন্ট।
কনসিস্ট অ্যাপারেল লিমিটেড, নতুন লিড সনদ পাওয়া কারখানাটি, ৮৪ পয়েন্ট অর্জন করে প্লাটিনাম রেটিং পেয়েছে। এটি ২০২৫ সালে সনদপ্রাপ্ত প্রথম কারখানা। এ অর্জন দেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় গর্বের বিষয়।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৩৩টি কারখানা লিড সনদ অর্জন করেছে। এর মধ্যে:
১. প্লাটিনাম রেটিং: ৯৩টি।
২. গোল্ড রেটিং: ১২৬টি।
৩. সিলভার রেটিং: ১০টি।
৪. সার্টিফায়েড রেটিং: ৪টি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত শুধু বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে। পোশাক কারখানাগুলো উন্নত প্রযুক্তি, টেকসই ভবন নির্মাণ, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হয়েছে।
লিড সনদের জন্য আবেদনকারী কারখানাকে নির্মাণ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পরিবেশ সংরক্ষণে মানসম্মত হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ:
১. কম জ্বালানি ব্যবহার।
২. পুনর্ব্যবহৃত পানি।
৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নত প্রযুক্তি।
৪. পরিবেশবান্ধব কাঁচামাল ব্যবহার।
এ প্রক্রিয়াগুলো শুধু পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখে না, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জনেও সহায়তা করে।
বাংলাদেশে সবুজ কারখানার এই সংখ্যা বিশ্বে শীর্ষে। লিড সনদ অর্জনের মাধ্যমে দেশের পোশাক খাত প্রমাণ করেছে, টেকসই উন্নয়ন ও শিল্পায়ন একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এটি শুধু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণে বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে।
পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি দেশের পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক সুনাম আরও বাড়াবে। বিজিএমইএর এ উদ্যোগ শুধু দেশের অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করছে না, বরং বিশ্বের সামনে পরিবেশবান্ধব শিল্পের মডেল হিসেবে তুলে ধরছে বাংলাদেশকে।