টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের আহ্বান
- By Jamini Roy --
- 07 January, 2025
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, লন্ডনে তিনি বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি এই তদন্ত আহ্বান করেন।
সোমবার (৬ জানুয়ারি), বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে, যুক্তরাজ্যের স্বাধীন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। টিউলিপ নিজেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি লিখে এই তদন্তের আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস ব্রিটিশ মন্ত্রীদের কার্যক্রমের মানদণ্ড তদারকি করেন। তিনি তদন্ত করবেন, টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হিসেবে কোনো বিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না।
চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন:
“গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি গণমাধ্যমের খবরের কেন্দ্রে রয়েছি। আমার আর্থিক বিষয় এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আমার পরিবারের সংযোগ নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক কিছুই সত্য নয়। আমি কোনো ভুল করিনি। তবে, আমি চাই, সন্দেহ দূর করতে আপনি এই অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুন এবং সত্য প্রকাশ করুন।”
সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে টিউলিপ কোনো ধরনের অর্থ না দিয়ে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন। ফ্ল্যাটটি তাকে দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী, যিনি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
এছাড়া, সানডে টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিককেও বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন মঈন গনি নামের এক আইনজীবী, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক একসময় ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন বলে জানা যায়।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। তিনি দেশের আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং শেখ রেহানার মেয়ে। এই পারিবারিক সংযোগও অভিযোগগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
অভিযোগ উঠার পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিক ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। লেবার পার্টি এবং ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের অনেকেই এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন।
তবে, টিউলিপের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে তিনি কোনো ধরনের বেআইনি কার্যক্রমে জড়িত নন।
“আমি বিশ্বাস করি, স্বচ্ছতা এবং সততা আমার দায়িত্বের প্রধান অঙ্গ। আমি সত্যের পক্ষে আছি এবং যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অভিযোগের তদন্তের ফলাফল লেবার পার্টির ভাবমূর্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। টিউলিপ সিদ্দিকের মতো প্রভাবশালী নেত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলটির অবস্থান দুর্বল করতে পারে।
তবে, টিউলিপের এই পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক সততা এবং দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হতে পারে। তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে, এটি তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।