আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন নতুন অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ
- By Jamini Roy --
- 25 November, 2024
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে সরকার প্রকাশ করেছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’। গতকাল রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই গেজেট প্রকাশ করে। এতে স্বাক্ষর করেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী।
নতুন সংশোধনীতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা যোগ করা হয়েছে। এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। একইসঙ্গে, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে। এছাড়া, বার কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর সচিবালয়ে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন এই আইনটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে খসড়ায় রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বাদ দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করে, এই আইনকে নির্দিষ্ট অপরাধের বিচারেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত এবং রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে যুক্ত করলে আইনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
নতুন অধ্যাদেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশগ্রহণ: জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মামলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
২. ক্ষতিপূরণ আদেশ: ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা পাবে ট্রাইব্যুনাল।
৩. বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ: বার কাউন্সিলের অনুমোদনে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া যাবে।
৪. স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি: সংশোধনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এ এত বড় সংশোধনী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশংসিত হলেও বিভিন্ন মহলে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত আগস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ড এবং গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত শুরু হয়। তবে আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই বিচার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের এই সংশোধন বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জাতিসংঘের সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, এবং বিদেশি আইনজীবীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন কেবল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না, বরং দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাও বাড়াবে।