নিউইয়র্কে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘ইলাইজা’ সিনসিনাটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কারে সম্মানিত
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
নিউইয়র্কে নির্মিত বাংলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইলাইজা’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখল। ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সিনসিনাটি ২০২৫–এ ছবিটির নির্মাতা, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কুইন্স-ভিত্তিক চলচ্চিত্র পরিচালক রাজীদ সিজন অর্জন করেছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার। গত ৭ ডিসেম্বর উৎসবের মূল ভেন্যু মারিমন্ট থিয়েটারে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওহাইওর সিনসিনাটিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এ উৎসবে উপমহাদেশের মানুষের জীবন, সংগ্রাম ও সংস্কৃতিনির্ভর চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। নিউইয়র্কস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় চার দিনব্যাপী উৎসব চলেছে শহরের তিনটি ভেন্যুতে।
বছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক উৎসবে যাত্রা করা ‘ইলাইজা’ এখন পর্যন্ত নয়টি পুরস্কার জিতেছে। সম্প্রতি এটি অস্কার–যোগ্যতা সম্পন্ন তাসবির চলচ্চিত্র উৎসবে ‘তাসবির এমারেল্ড অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে। নিউইয়র্কের এক বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারের গল্পে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে হলুদ ট্যাক্সির মেডালিয়ন সংকট, ট্রান্সজেন্ডার বাস্তবতা, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আত্মহত্যা–বিরোধী বার্তা গুরুত্বপূর্ণভাবে উঠে এসেছে।
পরিচালক রাজীদ সিজন বলেন,
“জীবনের লড়াইয়ে অনেকেই হতাশায় ভুল সিদ্ধান্ত নেন। আমি এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছি—কারণ প্রতিটি জীবনই অমূল্য।”
উৎসবের পরিচালক রাতী আপানা জানান,
“এ বছর আমরা বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় ও পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি প্রদর্শন করেছি। ‘ইলাইজা’ অত্যন্ত সুন্দর ও আবেগঘন—দর্শকের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করে। রাজীদের পরিচালনা সত্যিই অনবদ্য, তাই তাকে শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কারে সম্মানিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
ছবির প্রধান চরিত্র হায়দার–এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এজাজ আলম। তিনি বলেন,
“নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন অভিনয়ের সঙ্গে থাকলেও এটি আমার প্রথম চলচ্চিত্র। একজন অভিবাসী হিসেবে গল্পটি আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। দর্শকের ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে।”
‘নীলিমা’ চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী দেবজানী ব্যানার্জি বলেন,
“রাজীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল আগেই। গল্পটির গভীরতা আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে। বাংলা ভাষা ও গল্পের প্রতি আমার টান বরাবরই গভীর—তাই ‘ইলাইজা’ করতে পেরে আনন্দিত।”
দর্শক ক্রিস্টিন ব্রিজার্স আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“চলচ্চিত্রটি আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে। রাজীদ খুবই সহমর্মী মানুষ—তার সঙ্গে কথা বলতে পেরে ভালো লেগেছে। আমি আমার মেয়েকে আত্মহত্যায় হারিয়েছি, তাই ছবির গল্প আমাকে আবেগাপ্লুত করেছে।”
বাংলাদেশি নির্মাতার হাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই সাফল্য প্রবাসী বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও সৃষ্টিশীলতাকে বৈশ্বিক অঙ্গনে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরল।

















