Logo

আন্তর্জাতিক    >>   করাচিতে বিস্ফোরণে কাঁপল শহর: প্রাণ গেল ২ চীনা নাগরিকের

করাচিতে বিস্ফোরণে কাঁপল শহর: প্রাণ গেল ২ চীনা নাগরিকের

করাচিতে বিস্ফোরণে কাঁপল শহর: প্রাণ গেল ২ চীনা নাগরিকের

পাকিস্তানের করাচি আবারও ভয়াবহ জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে। করাচি বিমানবন্দর এলাকার কাছে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ২ চীনা নাগরিক। এই বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন, এবং বিস্ফোরণের তীব্রতা পুরো এলাকা কাঁপিয়ে দেয়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সাংবাদিকদের পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় তারা নিশ্চিত করে যে, এই হামলা চীনা নাগরিকদের লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছে। চীনা দূতাবাসের দেওয়া বিবৃতিতে জানা গেছে, এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি কনভয়, যারা করাচির কাশিম বন্দরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছিলেন।চীনা প্রকৌশলীদের নিয়ে চলা গাড়িতে বিস্ফোরক ডিভাইস সেট করে এই হামলা চালানো হয়। গাড়িটির ভেতরেই বিস্ফোরক ডিভাইসটি রাখা হয়েছিল, যা বিস্ফোরিত হয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার সৃষ্টি করে।

বেলুচ লিবারেশন আর্মি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। এর আগেও তারা এই প্রদেশে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে অন্তত ৭০ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বিএলএ একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যারা বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। তারা চীনা প্রকল্পগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, বিশেষ করে যেসব প্রকল্প চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (CPEC) অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

বিস্ফোরণের পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তবে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এই হামলা সন্ত্রাসীদের কাজ, নাকি দুর্ঘটনা—তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক তদন্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত মিলেছে।

পাকিস্তানে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এই ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। দূতাবাসটি জানায়, নিহত চীনা প্রকৌশলীরা পোর্ট কাসিম পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে কাজ করছিলেন, যারা করাচির কাছে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC)-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।চীনের অর্থায়নে নির্মিত এই প্রকল্প পাকিস্তানের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবে বিএলএ এবং অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি CPEC-এর বিভিন্ন প্রকল্পকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

এই হামলার পর পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও চাপে পড়েছে। চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং। পাকিস্তান সরকার চীনের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পের সুরক্ষা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

করাচির এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ শুধু পাকিস্তানেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।