সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে মার্কিন বৈঠক
- By Jamini Roy --
- 21 December, 2024
সিরিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশটির নতুন প্রশাসনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠক করলো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরা। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সিরিয়ার নতুন শাসক আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করেন দামেস্ক সফররত সিনিয়র মার্কিন কূটনীতিকরা। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব জানানো হয়েছে। দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা ও উত্তরণ নিয়ে এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, সিরিয়া ইসলামী শাসনের পথে যাবে, নাকি গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক বারবারা লিফ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, “আহমেদ আল-শারা অত্যন্ত বাস্তববাদী মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এটি কার্যকর আলোচনা ছিল, তবে কাজই প্রমাণ করবে তার প্রতিশ্রুতির সত্যতা।”
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে হুমকি সৃষ্টি করতে দেওয়া যাবে না। আল-শারা আশ্বাস দিয়েছেন যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, এইচটিএস নেতা আল-শারার বিরুদ্ধে যে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হবে।
আহমেদ আল-শারা ও তার দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পশ্চিমা দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এই পরিবর্তনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে দলটি কঠোর ইসলামী শাসন চাপিয়ে দেবে, নাকি গণতন্ত্রের পথে যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের পথে এগোতে হলে এইচটিএসকে সংখ্যালঘু এবং নারীদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে এই বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।
গত দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিক রূপরেখা প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন: সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- সন্ত্রাস দমন: সিরিয়ার মাটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থল হতে না দেওয়া।
- মানবাধিকার নিশ্চিত করা: নারীর অধিকার ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
২০২১ সালে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সিরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। আসাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে হায়াত তাহরির আল-শাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত নভেম্বরে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেছে যে, সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্তরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি গণতন্ত্রকেন্দ্রিক হবে নাকি ইসলামিক শাসনের পথে এগোবে, তা নির্ধারণ করবে আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন সরকার।
বিশ্ববাসী এখন নজর রাখছে, নতুন নেতৃত্বের অধীনে সিরিয়া কীভাবে নিজেদের রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ ঘটায়।