Logo

আন্তর্জাতিক    >>   মিয়ানমারের সেনা সদর দফতর দখলে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের সেনা সদর দফতর দখলে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের সেনা সদর দফতর দখলে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের অ্যান শহরে গুরুত্বপূর্ণ এক সেনা সদর দফতর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে জানায়, "দুই সপ্তাহের তীব্র লড়াই শেষে মধ্যরাতে আমরা ওয়েস্টার্ন মিলিটারি রিজিওনাল কমান্ড হেডকোয়ার্টার্স পুরোপুরি দখলে নিয়েছি।"

আরাকান আর্মি জানায়, দখলের সময় জান্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কিয়াও কিয়াও থান ও থাউং তুনকে বন্দি করা হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার এই আঞ্চলিক কমান্ড পতনের ফলে বিদ্রোহীরা ম্যাগওয়ে অঞ্চলে তাদের সামরিক অভিযান আরও তীব্র করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

২০২৩ সালের আগস্টে উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের ল্যাশিওতে নর্দইস্টার্ন কমান্ড দখল করেছিল বিদ্রোহীরা। এটি ছিল সামরিক জান্তার প্রথম আঞ্চলিক পতন। এরপর পশ্চিমাঞ্চলীয় এই কমান্ডের পতন জান্তার সামরিক ক্ষমতা আরও দুর্বল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

২০২১ সালের শুরুতে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই দেশটি অস্থিরতায় নিমজ্জিত। সামরিক অভ্যুত্থানের পর ব্যাপক বিক্ষোভ থেকে শুরু হয় সশস্ত্র বিদ্রোহ। আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের অক্টোবরে জান্তাবিরোধী অভিযান শুরু করে, যা ক্রমেই নতুন নতুন সামরিক বিজয়ে রূপ নিচ্ছে।

রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল হলেও এটি প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ। এই রাজ্যের কিয়াউক পিউ শহরে একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যা চীনের জন্য তেল ও গ্যাস সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। গেল নভেম্বরে আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর এই অঞ্চলে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।

সাম্প্রতিক অভিযানে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় আরাকান আর্মি। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানার ২৭০ কিলোমিটারের পুরো এলাকাই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মি তাদের সামরিক অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা পালিয়ে যাওয়া জান্তা সদস্যদের তাড়া করছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান এই অস্থিরতার দিকে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামরিক জান্তা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে কঠিন চাপে পড়েছে।