Logo

আন্তর্জাতিক    >>   নিউইয়র্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মামদানির লড়াই: দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

নিউইয়র্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মামদানির লড়াই: দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

নিউইয়র্ক নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মামদানির লড়াই: দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক রাজনৈতিক সংঘর্ষের মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। নভেম্বরের ৪ তারিখে ৩৪ বছর বয়সী বামপন্থি রাজনীতিক জোহরান মামদানি প্রায় নিশ্চিতভাবে শহরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি ধনীদের কর বাড়িয়ে নতুন সামাজিক কর্মসূচি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি খুব শিগগিরই নিউইয়র্ককে ঠিকঠাক করবেন। যার মধ্যে রয়েছে ফেডারেল এজেন্ট পাঠানো ও অর্থসহায়তা বন্ধের ঘোষনা।

নিউইয়র্ক শুধু আমেরিকার একটি শহর নয়—এটি দেশটির অর্থনীতির কেন্দ্র। শহরটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রায় ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা কানাডার মোট অর্থনীতির চেয়েও বড় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রায় ৯ শতাংশ। এটি করপোরেট সদরদপ্তর, আর্থিক সেবা, মিডিয়া, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা গবেষণার কেন্দ্রস্থল।

রাজনৈতিকভাবেও শহরটির প্রভাব বিরাট। যদিও জাতীয় রাজনীতিতে অ্যারিজোনার মতো ‘সুইং কাউন্টি’-র ভোট নিয়ে আলোচনা বেশি হয়। তবে নিউইয়র্কের দানশীল অভিজাত শ্রেণি ওয়াশিংটন ডিসির পরেই সর্বাধিক অর্থ দেয় ফেডারেল নির্বাচনে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে, তার দূত স্টিভ উইটকফ, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক, এমনকি কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের দুই নেতা চাক শুমার ও হাকিম জেফ্রিস সবাই নিউইয়র্কবাসী।

নিউইয়র্ক এখন গুরুতর অর্থনৈতিক চাপে। শহরের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী নাগরিক মোট আয়করের ৪০ শতাংশ বহন করেন। কিন্তু নতুন উচ্চ-আয়ের চাকরি কমছে, অনেক ধনী ব্যক্তি শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে সাধারণ নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সেখানে গড় ভাড়া দেশটির ৫০টি বড় শহরের তুলনায় দুই গুণেরও বেশি, শিশু যত্নের খরচ বছরে প্রায় ২৬ হাজার ডলার, যা গত পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

ফলে নিউইয়র্কের করভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা কল্যাণ ও শিক্ষা খাতে ব্যয় টেকসই রাখাকে কঠিন করে তুলছে। শহরের শেষ কার্যকর নেতা ছিলেন মাইকেল ব্লুমবার্গ। এখন নিউইয়র্কবাসী চাইছেন এক ভিন্ন ধরণের রাজনীতি। গত নির্বাচনে ট্রাম্প নিউইয়র্কে অস্বাভাবিকভাবে বেশি ভোট পেয়েছিলেন—কুইন্সে ৩৭ শতাংশ ও ব্রঙ্কসে ২৭ শতাংশ।

অন্যদিকে মামদানিও অসাধারণ বক্তা ও প্রভাবশালী যোগাযোগকারী। যিনি সাধারণ ভোটারদের কাছে নিজেকে ঘনিষ্ঠ করে তুলতে পারেন। তিনি প্রাথমিক নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন। মামদানির প্রস্তাবনা আকর্ষণীয় হলেও অর্থনৈতিকভাবে বিপজ্জনক। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে ধনীদের কর আরও বাড়াতে হবে, যা আরও ধনী নাগরিককে শহর ছাড়তে বাধ্য করবে—ফলে রাজস্ব সংকট তৈরি হতে পারে।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা  তিনি নিউইয়র্কের বাজেটের ৬.৪ শতাংশ ফেডারেল অনুদান বন্ধের ঘোষনা দিয়েছেন, যদিও কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া তিনি তা করতে পারেন না। এছাড়া তিনি শহরে অভিবাসনবিরোধী অভিযান বাড়ানোর কথা বলেছেন—যা উত্তেজনা ছড়িয়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের দিকে যেতে পারে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন নিউইয়র্ক এখন পরিণত হতে যাচ্ছে এমন এক রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে দুই বিপরীতমুখী নেতার চরমপন্থা শহরের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। সূত্র: দ্যা ইকোনমিস্ট, জাগোনিউজ