Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   নিউইয়র্কে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালি সংস্কৃতির মহোৎসব

নিউইয়র্কে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালি সংস্কৃতির মহোৎসব

নিউইয়র্কে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালি সংস্কৃতির মহোৎসব

প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক: 
গত ১৯ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার  নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত হলো প্রবাসী বাঙালিদের এক ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক মহোৎসব—‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’বাংলা ১৪৩২ । “অশুভের দুয়ারে শুনি-জনতার রণধ্বন” স্লোগান ধারণ করে হাজারো প্রবাসী নরনারী-শিশু-কিশোরের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, মুখোশ আর বর্ণিল প্লেকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রাটি এগিয়ে চলে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ বরাবর।

এক সময়ের বহুজাতিক ব্যস্ত জনপদ জ্যাকসন হাইটস তখন বাঙালি সংস্কৃতির রঙে থমকে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাও সমান মর্যাদায় উড়তে থাকে, প্রতীকী হয়ে ওঠে দুই দেশের সংস্কৃতির বন্ধন।

শোভাযাত্রার প্রারম্ভে ডাইভার্সিটি প্লাজায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী , প্রতীক, বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতন, রবীন্দ্র একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশনায় বাংলা ১৪৩২ নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয় গানে গানে। প্রবাস জীবনের যান্ত্রিকতা ভেঙে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়ায় সিক্ত হয় সকল উপস্থিত মানুষ।


এবারের আয়োজনে অংশ নেয় ৩০টিরও বেশি সংগঠন। ‘সম্মিলিত বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদ’ এর আয়োজনে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মুহাম্মদ আলী এবং সদস্য সচিব মুজাহিদ আনসারী। তাঁরা বলেন, “প্রবাসে থেকেও আমরা প্রজন্মের মধ্যে বাঙালির শেকড়ের শক্তি ছড়িয়ে দিতে পারছি—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।”


শোভাযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ ছিল  ,সবচেয়ে সুন্দর ও বর্ণাঢ্য সংগঠনের জন্য পুরস্কার ,সর্বাধিক সদস্যসংখ্যা নিয়ে অংশগ্রহণকারী সংগঠনের পুরস্কার ,সেরা দশজন ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতার শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান ।


এ মঙ্গল শোভাযাত্রা সফল করার লক্ষ নিয়ে সম্মিলিত বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদ, কয়েকটি ভাগে করে কমিটি গঠন করে । যার মধ্যে নিউইয়র্ক কমিটি উপদেষ্টা পরিষদ সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ (সভাপতি), আহকাম উল্লাহ, খোরশেদুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, জীবন চৌধুরী, প্রদীপ রঞ্জন কর, বাশীরুল হক, বেলাল বেগ, মাহবুবর রহমান, মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, শরাফ সরকার, শামসুল আলম বকুল, সউদ চৌধুরী, সুব্রত বিশ্বাসসহ বিশিষ্টজনেরা।


এছাড়া কার্যকরী পরিষদ ছিলেন  ,আহ্বায়ক রথীন্দ্রনাথ রায় , যুগ্ম আহ্বায়ক: সাগর লোহানী, 
সদস্য সচিব: মুজাহিদ আনসারী ,যুগ্ম সদস্য সচিব: সনজীবন কুমার , প্রধান ব্যবস্থাপক ছিলেন চ‍্যলেন আই টিভি নিউইয়র্কের প্রধান রাশেদ আহমেদ ,     কার্যকরী সদস্য হিসেবে ছিলেন অর্ঘ্য সারথী সিকদার, আব্দুল কাদের, আশীষ রায়, আল আমিন বাবু, আলী হাসান কিবরিয়া অনু, উৎপল চৌধুরী, এএফএম আফতাবুজ্জামান, এ এম এ মতিন মিঠু, ওয়াহেদুজ্জামান লিটন, কামাল হোসেন মিঠুসহ আরো অনেকে।

এছাড়াও উপ পরিষদে ছিলেন ,অনুষ্ঠান ও অভ্যর্থনা উপ-পরিষদ আহ্বায়ক - কাবেরী দাশ, সদস্য সচিব - সাবিনা হাই উর্বি ,প্রচার-প্রকাশনা উপ-পরিষদ: আহ্বায়ক - জাকির হোসেন বাচ্চু , শোভাযাত্রা উপ-পরিষদ: আহ্বায়ক - রামদাস ঘরামী, শৃঙ্খলা উপ-পরিষদ: আহ্বায়ক - কাজল মাহমুদ , শোভাযাত্রার সময় পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লালনগীতি, লোকসংগীতের ছোঁয়া নিয়ে একাধিক পরিবেশনা।

এসো হে বৈশাখ’ ধ্বনিতে মেতে ওঠে গোটা কমিউনিটি। রঙিন মুখোশ, বিশালাকার গ্রামবাংলার প্রতীকী শিল্পকর্ম, ঢাকের বাদ্য আর বৈশাখী পোশাকে শিশু-কিশোরদের ছন্দময় উপস্থিতি এনে দেয় বাঙালির ঐতিহ্যের এক অপূর্ব প্রকাশ।

অনুষ্ঠানটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—‘সহস্র কণ্ঠে বাংলা গানের সম্মিলিত পরিবেশনা’, যা সম্প্রীতির জয়গানে রূপ নেয়।
নিউইয়র্ক স্টেট এবার প্রথমবারের মতো ‘বাংলা নববর্ষ’ দিবসকে অফিশিয়ালি স্বীকৃতি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের নববর্ষ আয়োজনগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে মূলধারার রাজনীতিতেও।

একদিন হয়তো এখান থেকেই কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও উঠে আসবে—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন রথীন্দ্রনাথ রায়।
নিউইয়র্কের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল শুধু উৎসবের নয়, এটি ছিল বাঙালির সংস্কৃতির ঐক্যের, মূলধারায় আত্মপ্রকাশের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শেকড় আঁকড়ে রাখার এক অবিস্মরণীয় আয়োজন।