বৈশাখের আনন্দে আমেজিত নিউইয়র্ক: আনন্দধ্বনির বর্ষবরণে নৃত্য, গান আর আবৃত্তির ঝরোঝরিতে মুগ্ধ দর্শক
প্রজ্ঞা নিউজ ডেস্ক:
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আয়োজন করা হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। কুইন্সের দ্য মেরি লুইস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘বর্ষবরণ ১৪৩২ ও বাংলা গানের আসর’, যা আয়োজন করে ‘পেজেন্ট আনন্দধ্বনি’ ও ‘টিএন২৪’। শত শত প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে বাংলা সংস্কৃতির রঙিন আবহে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মিলনায়তন।
শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় জমে ওঠে সন্ধ্যা
১৩ এপ্রিল, রবিবার বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমেই মঞ্চে আসে শিশু শিল্পীরা। তাদের প্রাণবন্ত পরিবেশনা দিয়ে পরিপূর্ণ হয় বৈশাখের আমেজ। সূচনা ভাষ্য এবং সঞ্চালনায় ছিলেন হাফসা, মেহের ও অর্ঘ্য। এরপর একে একে সেতার ও আলাপে অংশ নেন ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী, পিনু ও দেবু। কোরাস পরিবেশনায় ‘আজি এ আনন্দসন্ধ্যা’ দিয়ে অনুষ্ঠানটির গানের পর্বের সূচনা হয়।
নৃত্য, গান, আবৃত্তিতে বৈচিত্র্যময় আয়োজন
পর্যায়ক্রমে একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেন একঝাঁক শিল্পী। উল্লেখযোগ্য পরিবেশনার মধ্যে ছিল —
• লিলি মুজমুদারের ‘এ কথাটি মনে রাখিস’,
• তরুণ চন্দের ‘পরের জায়গা পরের জমিন’,
• ক্ল্যারা রোজারিওর আবৃত্তি ‘প্রথম আলো’,
• রাজীব সরকারের গান ‘আমায় ভাসাইলিরে আমায়’,
• পুজা সিনহা রায়ের কণ্ঠে ‘আমার প্রাণে গভীর গোপন’,
• শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো’,
• পূর্বাশা রায়ের ‘তুমি নব নব রূপে এসো’,
• শুক্লা রায়ের সনজীদা খাতুন স্মরণ পাঠ,
• বড়দের সমবেত কণ্ঠে ‘পথে চলে যেতে’ এবং ‘ও আমার বাংলা মা তোর’।
বিশেষভাবে হৃদয় চৌধুরীর ‘আমার সকল রসের ধারা’, আবীর ঘোষের ‘তোমার আঁখির মতো’, কনিকা দাসের ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’, প্রতিমা সাহার ‘আমরা মলয় বাতাসে’ পরিবেশন দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
নৃত্য পরিবেশনায় ছিল শিশুদের নৃত্য ‘সংকোচন হ্বিলতা’ গানের সাথে এবং বড়দের পরিবেশনায় ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘এ যে অন্ধকারে বসে’ গানগুলির সাথে আকর্ষণীয় নৃত্য পরিবেশনা।
বাংলা গানের আসর ও সমাপ্তি
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা গানের আসর’, পরিচালনায় ছিলেন শুক্লা সরকার। একক গান পরিবেশন করেন শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথী, জয়ী চ্যাটার্জী, দেবজানী বর্ষা, আলভান চৌধুরী, জেরিন মায়শা এবং শাহীন শাহ।
সমাপ্তির আগে সবাই মঞ্চে এসে একসাথে গেয়ে ওঠেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, যার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সফল সমাপ্তি হয়।
ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল, এ আয়োজনে কোনো বক্তৃতার আয়োজন করা হয়নি। ফলে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে শুধু সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তির আবেশেই বুঁদ হয়ে ছিলেন দর্শক-শ্রোতারা। এভাবে বক্তৃতাবিহীন আয়োজনকে দর্শকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং জানান, এর ফলে অনুষ্ঠানের মূল আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও বাঙালিয়ানার অনন্য উদযাপন
প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ ও উদযাপনের জন্য এ আয়োজন বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।সবশেষে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অর্ঘ্য সারথী সিকদার উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন , ভবিষ্যতেও তারা এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন অব্যাহত রাখবেন, যাতে প্রবাসী প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির শেকড় আরো গভীরে প্রোথিত হয়।