বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন ইনক্ এর বিজয় দিবস , বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক মহোৎসব উদযাপন
- By Jamini Roy --
- 01 January, 2025
গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে আয়োজিত হয় এক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে জাতির শ্রেষ্ঠত্ব, স্বাধীনতা ও বাংলার ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিল বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন ইনক্, এবং এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী বিজয় দিবস উদযাপন ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুনমুন ও রুনা সাহার সঞ্চালনায় সংগঠনের ফাউন্ডার সভাপতি ড. সবিতা দাস উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বিজয় দিবসের গুরুত্ব, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করেন। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্টিভেন রাগা, নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও তার জনগণের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং বলেন, “এমনি বিজয়ের দিন, যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার রোল মডেল হয়ে উঠেছে, তখন এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সমাজসেবক ও কমিউনিটির লিডার অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও আজকাল পত্রিকার সম্পাদক শাহ নেওয়াজ এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ও কমিউনিটির লিডার ড. প্রভাত চন্দ্র দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চ্যালেন আই এর উত্তর আমেরিকার ব্যুরো প্রধান রাশেদ আহম্মেদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু প্রমুখ ।
বক্তারা বলেন , মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবনের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, মুক্তিযোদ্ধারা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি, তারা জাতীয় স্বাধীনের চেতনাকে অটুট রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতি আমাদের শক্তি যোগায়, এবং দেশকে একত্রিত করে রাখে। তাদের আত্মত্যাগ ও সাহসীকতার জন্য তারা চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে অমর থাকবে। এবং যারা বাংলার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং পিঠা উৎসবের ঐতিহ্য নিয়ে তাঁদের মূল্যবান আলোচনা করেন। বিজয় দিবস ও পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি, ও যন্ত্র সঙ্গীতের এক দারুণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের নৃত্য পর্বে অংশগ্রহণ করেন ১৭ জন প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সৃজিতা হিয়া, আদ্রিকা সেন ভৌমিক, রাইয়সি বিশ্বাস, অস্মিতা মন্ডল সহ আরও অনেক তরুণ ও প্রবীণ শিল্পী। এই নৃত্যশিল্পীরা বিজয়ের মন্ত্র ও বাংলার ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলেন এক অনবদ্য পারফরম্যান্সে।
বিজয়ের অনুভূতি ও বাংলার ঐতিহ্যকে নিয়ে আবৃত্তি করেন বেশ কিছু তরুণ ও প্রবীণ কবি। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আগামী পৃথ্বীরাজ সেন, রূপন্তি সাহা, অর্ক ঘোষ, অথরা ঘোষ, দুর্জয় ভদ্র, প্রান্তি ভদ্র, সৌভিত রায় চৌধুরী প্রমুখ। তাদের আবৃত্তি জাতির বিজয়ের মহান ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যকে এক নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে । এছাড়া সংগীত পর্বে ছিলেন ড. সবিতা দাস, রুনা রায়, জুলি খাস্তগীর, ইমন বিশ্বাস, শিলা চন্দ এবং আরও অনেকে। তারা শাস্ত্রীয় সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি পরিবেশন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রজ্ঞাত্তম সাহা প্রজ্ঞা এর যন্ত্র সঙ্গীত, যা অনুষ্ঠানের এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে। এদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল পিঠা উৎসব, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্যবাহী পিঠা। বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছিল পুলীনি, রকমচেকি, পাটিসাপটা, চুরমা এবং আরও অনেক পিঠা, যা অতিথিদের প্রিয় খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এই পিঠাগুলোর মাধ্যমে বাংলার গ্রামীণ জীবন ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বিশেষভাবে আয়োজিত ছিল একটি অংকন প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রায় ৫০ জন শিশু শিল্পী। তাদের মধ্যে আগামী পৃথ্বীরাজ সেন, রূপন্তি সাহা, পূর্ণা সাহা পূর্ণা , অর্ক ঘোষ, কৌশিক আহমেদ এবং পূর্ণা দে সহ আরও অনেক শিল্পী তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানকে আরো রঙিন করে তোলেন
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সঞ্চালকরা সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান এবং আগামী দিনে এই ধরনের সাংস্কৃতিক উদ্যোগে আরও অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতন ইনক্ এর এই আয়োজন শুধু বিজয় দিবস ও বাংলার ঐতিহ্যকে উদযাপন নয়, বরং একটি সশক্ত সাংস্কৃতিক ঐক্যেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এভাবে বিজয় দিবস উদযাপন ও বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব এক অপূর্ব সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রইলো।