Logo

রাজনীতি    >>   সচিবদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ২৫ নির্দেশনা: প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার আহ্বান

সচিবদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ২৫ নির্দেশনা: প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার আহ্বান

সচিবদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ২৫ নির্দেশনা: প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার আহ্বান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের জন্য ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এই নির্দেশনাগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সচিব ও সিনিয়র সচিবদের কাছে ৩০ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ, গতিশীল এবং জনবান্ধব করার লক্ষ্যে প্রণীত।

৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিবসভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজে সিনিয়র সচিব ও সচিবদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত সকল সচিবের সামনে এই নির্দেশনাগুলো উপস্থাপন করা হয়, যা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বর সচিবদের কাছে চিঠি আকারে প্রেরণ করা হয়। এই সভার সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যেখানে সচিবসভার আয়োজন সব সময় সরকারের প্রধান কিংবা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে করা হয়।

সচিবসভার নির্দেশনাগুলোর প্রেক্ষাপট তৈরি হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর, যা ৫ আগস্টের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ফলপ্রসূ হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় এবং ৪ সেপ্টেম্বর প্রথম সচিবসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজ অধীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যা সচিবসভার প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে।

প্রধান উপদেষ্টার ২৫টি নির্দেশনা দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ও কার্যক্রমকে নতুনভাবে সাজানোর লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে প্রধান কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসনিক সংস্কার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ‌‘মার্চিং অর্ডার’ অনুসরণ করা হবে।

২. সৃজনশীল ও নাগরিকবান্ধব প্রশাসন: প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগকে সৃজনশীল মানসিকতা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার পরিকল্পনা ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও সেবা সহজীকরণ: দুর্নীতি দূরীকরণ এবং সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা হবে।

৪. বাজেট ও অর্থ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা: বাজেটের স্বচ্ছতা এবং সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

৫. অর্থনৈতিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা: আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সচিবদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৬. বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সুরক্ষা: বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সচিবদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো ধরনের বিঘ্নতা না ঘটে।

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

৮. ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি: বাজার নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২৫টি নির্দেশনা বিভিন্ন দিক থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা, দক্ষতা বৃদ্ধি, জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া, এবং দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে সচিবদের একান্ত সহযোগিতা ও উদ্যোগ কামনা করা হয়েছে। সচিবদের অনুরোধ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সেই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অগ্রগতির রিপোর্ট প্রদান করতে। এছাড়াও, নির্দেশনাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে সচিবদের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ২৫টি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রশাসন ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নির্দেশনাগুলোর মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, জনসেবার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক প্রতিপত্তি আরও সুসংহত হবে। দেশের জনগণ একটি জনমুখী, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল সরকার প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হবেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।