তালেবান নেতাদের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিক্রিয়া
- By Jamini Roy --
- 26 January, 2025
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তালেবান শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করায় আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এ আবেদনকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দ্বিমুখী নীতিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে। খবর এএফপির।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান আদালতে তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং আরেক নেতা আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর ব্যাপক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আইসিসির এ আবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, "আইসিসির অনেক সিদ্ধান্তের মতোই এই সিদ্ধান্তও আইনি ভিত্তিহীন। এটি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।" তারা আরও উল্লেখ করে, "এটা দুঃখজনক যে আইসিসি আফগানিস্তানের ২০ বছরের দখলদারিত্বকালে বিদেশি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।"
আফগানিস্তানের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নবী ওমারি বলেন, "আইসিসি আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। যদি এটি সত্য ও ন্যায়ের আদালত হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে আদালতে তোলা উচিত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনই যুদ্ধের কারণ এবং তারা গাজাসহ অন্যান্য স্থানে অশান্তির সূচনা করেছে।"
তালেবান সরকার অভিযোগ করে যে, পশ্চিমা শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। তাদের মতে, আইসিসির এই উদ্যোগ আসলে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং তালেবানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাবকে বৈধতা দিতে একটি কৌশল।
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের করা এই আবেদনের বিষয়ে আদালতের তিন বিচারকের একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত নেবেন। এই ধরনের আবেদনের রায় দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে গড়ে এটি তিন মাস সময় নিতে পারে।
করিম খানের আবেদনে নারী ও মেয়ে শিশুদের ওপর বৈষম্যের অভিযোগ এনে বলা হয়, তালেবান সরকার নিয়মিতভাবে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাধীন চলাফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে এই আবেদনের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে। এর মধ্যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আইসিসির এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও অনেকেই এটিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশ্ব রাজনীতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে তালেবান সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মধ্যে এই উত্তেজনা কীভাবে মীমাংসিত হবে, সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।