মহাকাশে বাঁধ নির্মাণে চীনের উচ্চাভিলাষ
- By Jamini Roy --
- 13 January, 2025
চীন মহাকাশে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি অনন্য বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিয়ে চীনা বিজ্ঞানীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রাথমিক নকশাও প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকল্পটিকে বলা হচ্ছে ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম অন স্পেস’ বা ‘থ্রি গর্জেস ড্যাম অ্যাবাভ আর্থ’। চীনের এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
চীনের ইয়াংজি নদীর ওপর অবস্থিত থ্রি গর্জেস ড্যাম বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এখান থেকে প্রতি বছর ৮৮.২ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। মহাকাশে চীনের প্রস্তাবিত বাঁধকে এই ড্যামের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। তবে এটি হবে সৌরশক্তিনির্ভর। মহাশূন্যে এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো নিরবচ্ছিন্ন সৌরশক্তি উৎপাদন এবং তা পৃথিবীতে পাঠানো।
চীনের বিখ্যাত রকেট বিজ্ঞানী লং লেহাও এই প্রকল্পের নকশা তৈরি করেছেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপরে জিয়োস্টেশনারি কক্ষপথে এক কিলোমিটার প্রশস্ত সৌর প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এই সৌর প্যানেল থেকে আবহাওয়া, দিন-রাতের পরিবর্তন বা ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রকল্পটি সফল হলে বছরে যে পরিমাণ সৌরশক্তি উৎপন্ন হবে তা পৃথিবীতে উত্তোলন করা অপরিশোধিত তেলের পরিমাণের সমান হবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রকেটের প্রয়োজন। বিজ্ঞানী লং জানিয়েছেন, একটি রকেটের নাম ‘সিজেড-৫’, যার উচ্চতা ৫০ মিটার। এটি ভারী বস্তু বহনে সক্ষম। দ্বিতীয় রকেটের নাম ‘সিজেড-৯’, যার উচ্চতা ১১০ মিটার এবং এটি ১৫০ টন পর্যন্ত সামগ্রী বহন করতে পারবে। মহাশূন্যে সৌর প্যানেল বসানোর কাজ এই রকেট দিয়েই সম্পন্ন হবে।
মহাকাশ গবেষণায় সোভিয়েত রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ-যুগের প্রতিযোগিতার কথা স্মরণ করে বলা যায়, বর্তমানে এই দৌড়ে শামিল হয়েছে চীন। ইতোমধ্যেই তারা নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করেছে। মহাকাশে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প সফল হলে চীন এই প্রতিযোগিতায় অনেক এগিয়ে যাবে।
বিশ্বের অনেক মহাকাশ গবেষক চীনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান। কারণ এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি এবং বিপুল অর্থ। মহাকাশে সৌর প্যানেল বসানো, সেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা পৃথিবীতে পাঠানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রকল্পটি সফল হলে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। সৌরশক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণও কমানো সম্ভব হবে।
গত কয়েক দশক ধরে সৌরশক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা মহাকাশের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। চীনের এই প্রকল্পটি সফল হলে, মহাকাশ গবেষণার নতুন দিক উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীন এই প্রকল্পে সফল হলে তা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে না, বরং মহাকাশ গবেষণায় চীনের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।