৩৭ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন
- By Jamini Roy --
- 24 December, 2024
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার শাসনামলের শেষ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করেছেন। তবে তিনি তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেননি। এই তিনজন হলেন- ডাইলান রুফ, জোখার সারনায়েভ, এবং রবার্ট বাউয়ার্স।
বাইডেনের এই পদক্ষেপটি বড়দিনের আগের দিন, ২৩ ডিসেম্বর, জানানো হয়। এটি তার শাসনামলের শেষ সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন, যিনি মৃত্যুদণ্ড বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন, এক বিবৃতিতে জানান যে, তার প্রশাসন "মৃত্যুদণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা" আরোপ করেছে, তবে এই নীতি সন্ত্রাসবাদ এবং ঘৃণাজনিত গণহত্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তাই এই তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রাখা হয়েছে।
ফেডারেল মৃত্যুদণ্ডে থাকা তিনটি অপরাধীর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম হচ্ছে জোখার সারনায়েভ, যিনি ২০১৩ সালে বoston ম্যারাথন বোমা হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া, ডাইলান রুফ, যিনি ২০১৫ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লস্টনে একটি চার্চে ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গ উপাসককে হত্যা করেছিলেন, এবং রবার্ট বাউয়ার্স, যিনি ২০১৮ সালে পিটসবার্গের ট্রি অব লাইফ সিনাগগে ১১ জন ইহুদি উপাসককে হত্যার জন্য দায়ী ছিলেন, তাদের সাজা বাতিল হয়নি।
বাইডেন বলেছেন, "আমি এই হত্যাকারীদের নিন্দা জানাই এবং তাদের কারণে শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাই। তবে আমি বিশ্বাস করি, ফেডারেল পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারের অবসান হওয়া উচিত, যেহেতু এটি মানবাধিকার এবং নৈতিকতার পরিপন্থী।"
যদিও বাইডেন তার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী ছিলেন, তার আমলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, এই পদক্ষেপটি তার প্রশাসনের নীতি অনুসারে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়, যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার অবসান হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি পুনর্নির্বাচনের প্রচারণায় রয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড ব্যবস্থার সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্প তার শাসনামলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছেন এবং অভিবাসীদের অপরাধ ও মাদক পাচারকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব দেন। ২০২০ সালে তার শাসনামলে এই প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়, এবং তার শাসনের শেষ ছয় মাসে ১৩টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাইডেনের এই পদক্ষেপটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিচার ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী এবং সমর্থকরা তাদের অবস্থান জোরালো করতে থাকবে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ২৩টি রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছে এবং ছয়টি রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২৪ সালে রাজ্য পর্যায়ে ২৫টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দেশের বিতর্কিত অবস্থানকে আরও তীব্র করে তুলছে।
এই পদক্ষেপটি বাইডেনের শেষ সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।