প্রধান উপদেষ্টা :আজকের প্রতিবেদনগুলো একটি নতুন বাংলাদেশের চার্টার তৈরির শুরু
- By Jamini Roy --
- 15 January, 2025
দেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে আজকে (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। এ প্রতিবেদনগুলির মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি হবে, যার উদ্দেশ্য গণঅভ্যুত্থানের একটি শক্তিশালী চার্টার গঠন করা। নতুন এই চার্টার হবে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত এবং এটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের এবং রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ তাদের সংশ্লিষ্ট কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হাতে তুলে দেন। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, "আজকের প্রতিবেদন হস্তান্তর শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজকের দিনটি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে, কারণ এ কমিশনগুলোর জন্ম হয়েছে আমাদের দেশের ইতিহাসের গভীর প্রবাহ থেকে। এটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির পুনরুত্থানের প্রতিফলন।"
তিনি আরো বলেন, "আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম। আজকের এই প্রতিবেদন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি দেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণ করবে এবং আমাদের জাতির জন্য একটি বড় চর্চা হয়ে দাঁড়াবে।"
ড. ইউনূস বলেন, এই প্রতিবেদনগুলির মাধ্যমে একটি নতুন জাতীয় চার্টার গঠিত হবে, যা দেশের জনগণের মধ্যে মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। এই চার্টারের লক্ষ্য হলো নতুন বাংলাদেশের জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করা, যা আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, "এই চার্টার কোনো দলীয় কমিটমেন্ট নয়, এটি বাঙালি জাতির একটি সনদ। এটি আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট, যা আমরা একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো।"
তিনি আরও বলেন, "যত দ্রুত সম্ভব এই চার্টার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এটি যেন হাত থেকে না ছুটে যায়। পরবর্তী সরকারও যেন এই চার্টারকে আঁকড়ে ধরে রাখে, যাতে আমাদের স্বপ্নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনও এই চার্টারের অংশ হবে এবং তা ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, "যদি এই চার্টার বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আমাদের স্বপ্নের ধারাবাহিকতা থাকবে না। তাই নির্বাচনও এই চার্টারের ভিত্তিতেই হতে হবে।"
প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর, প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "এ প্রতিবেদনগুলির মাধ্যমে আমরা এক নতুন আলোচনার পথ খুললাম, যা দেশের জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। আমরা আশা করছি, সকল রাজনৈতিক দল এই চার্টারে সাইন আপ করবে এবং এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করবে।"
এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট কমিশনের সদস্যরা, যারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক কাঠামোর সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুদক সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন এই প্রতিবেদনগুলি জমা দিয়ে দেশের ভবিষ্যত কাঠামোর জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, "এ প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা হয়ে থাকবে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করবে।"
আজকের এই প্রতিবেদন হস্তান্তর বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি দেশের নির্বাচনী এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ করার একটি সুযোগ। নতুন বাংলাদেশের চার্টার সবার সম্মতিতে গঠিত হবে এবং এটি দেশের জাতীয় কমিটমেন্টের অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে এবং রাজনৈতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।