মার্কো রুবিওকে পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারেন ট্রাম্প
- By Jamini Roy --
- 12 November, 2024
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিওকে পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করতে পারেন। যদি রুবিও চূড়ান্তভাবে এই পদে নিয়োগ পান, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম লাতিনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন। ১২ নভেম্বর, মঙ্গলবার কয়েকটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
রুবিও, যিনি ফ্লোরিডায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো—যেমন চীন, রাশিয়া, ইরান ও কিউবার বিষয়ে শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক হিসেবে পরিচিত। একাধিকবার তিনি ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার নীতি অনুসরণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের ব্যয়বহুল ও অকার্যকর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সমালোচনা করে আসছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রুবিওর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তিনি একাধিকবার বলেছেন, ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ইউক্রেনের জন্য ৯,৫০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজের বিরুদ্ধে ভোট দেন, যা তার কট্টর অবস্থান প্রতিফলিত করে। তবে, তার মতে, ইউক্রেন যদি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা শুরু করে, তাহলে সংঘাতের সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব।
রুবিওর পররাষ্ট্রনীতি প্রায়ই ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকে, যেখানে তিনি পূর্বের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ব্যয়বহুল প্রকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেছেন, “রাশিয়ার পক্ষে আমি নয়, তবে বাস্তবতা হলো আলোচনার মাধ্যমেই ইউক্রেনের জন্য সমাধান বের করা সম্ভব।” তার এই দৃঢ় অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
রুবিওয়ের রাজনৈতিক পটভূমি তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। ১৯৬২ সালে তার দাদা কিউবা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসেন। এই পটভূমি তাকে কিউবা এবং লাতিনো জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে, পাশাপাশি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে এক শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করায়।
২০১৬ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে, রুবিও বিভিন্ন বৈদেশিক নীতিতে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো—চীন, রাশিয়া ও ইরান সম্পর্কে। তিনি সব সময়ই বিশ্বাস করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি শক্তিশালী এবং দৃঢ় হওয়া উচিত, যাতে আমেরিকা বিশ্বে তার অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে পারে।
এর আগে, ট্রাম্প জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য এলিস স্টেফানিককে বেছে নিয়েছেন। তার পরবর্তী প্রশাসনে সীমান্তের বিষয়টি সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কট্টর অভিবাসী বিরোধী কর্মকর্তা টম হোমানকে। এসব নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্প তার পরবর্তী প্রশাসনকে কট্টর রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে শক্তিশালী করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
রুবিও যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, তার সামনে একটি বিপজ্জনক ও অস্থির বিশ্ব অপেক্ষা করছে। ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া এবং চীন—সবকিছুই তার সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি যে কঠোর পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক, তা দেখে মনে হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে শক্তিশালী এবং দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদানে মনোযোগী হবে।
এছাড়া, রুবিওর সমর্থকরা মনে করেন, তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া হলে, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি আরও দৃঢ় এবং ন্যায়সঙ্গত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।