মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যের মামলাসহ খালেদা জিয়ার ১০টি মামলা বাতিল হাইকোর্টের
- By Jamini Roy --
- 30 October, 2024
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং রাজধানীর দারুস সালাম ও যাত্রাবাড়ী থানায় দায়েরকৃত নাশকতার আরও ১০টি মামলা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আবশ্যক। তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল শুনানি করেন। আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এমন মন্তব্য করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করে। আদালত এই অভিযোগের ভিত্তিতে শাহবাগ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক সভায় খালেদা জিয়া বলেন, “আজকে বলা হয়, এত লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।” খালেদা জিয়ার এ মন্তব্য পরদিন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগ নেতা ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মনোভাবের অভিযোগ তুলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য অনুমোদন প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৪ জানুয়ারি মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মন্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যা দেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্বকে আঘাত করেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ আন্দোলন শুরু করে। সে সময় বিএনপি সরকার জাহানারা ইমামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।