ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান ইসরায়েলে যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশ্বের কোনো দেশই তাদের ভূখণ্ড ও জনগণের ওপর এটা সহ্য করবে না, ইসরায়েলও করবে না।” নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে ইরানের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন এবং দেশটির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন।
নেতানিয়াহু বলেন, "নিজেদের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু আমাদের অধিকারই নয়, এটি আমাদের দায়িত্বও। এবং ইসরায়েল সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।" এই বিবৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহু ইরানের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আভাস দেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহকে দমনে ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ১ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে ২ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে আইআরজিসি। এই হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে।
এদিকে, ৩ অক্টোবর কাতারে সফরকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না।" তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, "যদি ইসরায়েল ফিলিস্তিন ও লেবাননে সামরিক অভিযান বন্ধ না করে, ইরান আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।" ইরান নিজেদের আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করে এবং যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি নাকচ করেনি।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করারও আহ্বান করেন। তবে ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা দেশের দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, "অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো দেশের সাহায্য ছাড়াই ইসরায়েল এই যুদ্ধে জয়ী হবে।"
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলের নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন, আর ইরানও সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক চাপ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এই চলমান উত্তেজনা কেবল দুই দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই হুমকি তৈরি করছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া এবং ইরানের পাল্টা হুমকি এই সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও জটিল করে তুলছে, যা আগামীতে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।