Logo

আন্তর্জাতিক    >>   জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যু

জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যু

জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) জর্জিয়ার প্লেইন্সে নিজ বাড়িতে ১০০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের জীবনের অবসান ঘটল এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে জিমি কার্টারের কার্যালয়।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জিমি কার্টার জর্জিয়ার প্লেইন্সে নিজের বাড়িতে ‘হসপিস কেয়ার’-এ ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তিনি বাড়তি চিকিৎসার পরিবর্তে হসপিস কেয়ারে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তার পাশে ছিলেন স্ত্রী রোজালিন কার্টার, যিনি ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর মারা যান।

কার্টার সেন্টারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জিমি কার্টার নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তে পরিবার এবং মেডিকেল টিমের পূর্ণ সমর্থন ছিল।”

জিমি কার্টার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি তার ১০০তম জন্মদিন পালন করেন। ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার প্লেইন্সে জন্মগ্রহণকারী জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র একজন কৃষক ও দোকানির পরিবারে বড় হন। তিনি ১৯৪৬ সালে নেভাল একাডেমি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পরে পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। তবে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভালের জন্য এই চাকরি ছেড়ে দেন।

কার্টারের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর ছিলেন। এরপর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে ১৯৭৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তার প্রশাসনিক মেয়াদ খুবই চ্যালেঞ্জপূর্ণ ছিল। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পর একটি বিভক্ত জাতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন তিনি। তবে অর্থনৈতিক মন্দা ও ইরান জিম্মি সংকটের মতো সমস্যাগুলোর কারণে তিনি পুনঃনির্বাচনে রোনাল্ড রিগানের কাছে পরাজিত হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও জিমি কার্টার মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে নিজেকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন। ২০০২ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। কার্টার সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি।

জিমি কার্টার ছিলেন একজন প্রতিভাধর লেখক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে শিশু সাহিত্যসহ তিনি দুই ডজনেরও বেশি বই লিখেছেন। ধর্মীয় বিশ্বাস, মানবাধিকার এবং কূটনীতি নিয়ে তার লেখাগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তার গ্রন্থ “Faith: A Journey for All” ছিল পাঠকের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

জিমি কার্টার তার স্ত্রী রোজালিন কার্টারের সঙ্গে দীর্ঘ ৭৭ বছরের বৈবাহিক জীবন কাটিয়েছেন। এই দম্পতি চার সন্তান এবং ১১ জন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। কার্টারের পুত্র চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার বাবা শুধুমাত্র আমার নায়ক নন; তিনি শান্তি, মানবাধিকার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাসী সবার জন্যই নায়ক।”

জিমি কার্টারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ দেশটির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। তার মৃত্যু মার্কিন ইতিহাসে এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।

জিমি কার্টার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় থাকবেন একজন মানবতাবাদী নেতা, প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিবিদ এবং শান্তির দূত হিসেবে। তার জীবনের কর্মজীবন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।





P.S 220 Winter concert

P.S 220 Winter concert