রাশিয়ায় আশ্রিত বাশার আল-আসাদ, বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন স্ত্রী আসমা
- By Jamini Roy --
- 23 December, 2024
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আল-আসাদ মস্কোতে অবস্থান করে তার বর্তমান জীবন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে রুশ আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন এবং মস্কো ছাড়ার অনুমতি চেয়েছেন। আসমা জানিয়েছেন, তিনি লন্ডনে ফিরে যেতে চান।
তুর্কি ও আরব সংবাদমাধ্যমের বরাতে দ্য জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, আসমার এই আবেদন রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিচারাধীন।
আসমা আল-আসাদ ১৯৭৫ সালে লন্ডনে সিরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বড় হন। ২০০০ সালে তিনি সিরিয়ায় ফিরে বাশার আল-আসাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
২০০০ সালে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ২৪ বছর ধরে কঠোর হাতে দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু গেল ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং অন্যান্য বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই পরিস্থিতিতে বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন।
রাশিয়ায় আশ্রয় পাওয়ার পর বাশার আল-আসাদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাকে মস্কো ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়নি, এমনকি রাজনৈতিক তৎপরতাও চালাতে পারেন না। রুশ কর্তৃপক্ষ তার বিপুল পরিমাণ সম্পদও জব্দ করেছে।
জব্দ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে: ২৭০ কেজি স্বর্ণ, ২ বিলিয়ন ডলার, মস্কোতে ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।
বাশারের ভাই মাহের আল-আসাদ রাশিয়ায় আশ্রয়ের আবেদন করলেও এখনো তা মঞ্জুর হয়নি। মাহের ও তার পরিবারকে গৃহবন্দী রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ায় বসবাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট আসমা আল-আসাদ মস্কো ছাড়ার অনুমতি চেয়ে রুশ আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। তিনি লন্ডনে ফিরে যেতে চান বলে জানিয়েছেন।
আসমার এই সিদ্ধান্তের পেছনে বাশারের রাজনৈতিক পতন এবং রাশিয়ায় তাদের জীবনযাপনের সীমাবদ্ধতাকে কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বাশার আল-আসাদ সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, তিনি সিরিয়া ছাড়তে চাননি। দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে যাওয়ার একদিন পর রাশিয়ার অনুরোধে তিনি দেশ ছাড়েন।
বিবৃতিতে বাশার বলেন:
"আমি সিরিয়া ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা করিনি। ৮ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত আমি দামেস্কে ছিলাম এবং দায়িত্ব পালন করেছি। তবে রাশিয়ার অনুরোধে আমাকে রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়।"
বাশার আরও দাবি করেন, দামেস্কের পতনের সময়ও তিনি পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা করেননি। তিনি বলেছেন:
বাশার আল-আসাদের রাজনৈতিক পতন ও রাশিয়ায় তার বর্তমান জীবনযাপন তাকে একপ্রকার নির্বাসনের মধ্যে রেখেছে। আসমার বিচ্ছেদের আবেদন তাদের পারিবারিক সম্পর্কেও নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে থাকা বাশার এখন এক সংকটময় অবস্থায় রয়েছেন। অন্যদিকে, আসমার লন্ডনে ফেরার ইচ্ছা তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন তুলছে।