যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্বীকার
- By Jamini Roy --
- 15 December, 2024
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও উদ্যোগ। পশ্চিমা শক্তি, আরব দেশগুলো এবং সিরিয়ার প্রতিবেশীদের মধ্যে রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনার হাওয়া বইছে।
সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে। একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকায় এইচটিএস-কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই যোগাযোগ নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, “আমরা এইচটিএস এবং অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আমাদের নীতির বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। এটি সহায়তার আওতাভুক্ত এবং এই নীতিগুলো অঞ্চলে প্রযোজ্য।” তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শাসনব্যবস্থা ও কার্যক্রম নিয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছে।
জর্ডানের আকাবায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকরা একটি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। আরব মন্ত্রীরা একমত হন যে, সিরিয়ায় একটি স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে।
তুরস্ক, যা দীর্ঘদিন আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে, প্রায় ১২ বছর পর দামেস্কে তাদের দূতাবাস পুনরায় খুলেছে। ২০১১ সালে সিরিয়ার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর পর তুরস্ক দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। নতুন পরিস্থিতিতে এই উদ্যোগ তুরস্ক-সিরিয়া সম্পর্কের একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
এদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান নাইম কাসেম জানিয়েছেন যে, সিরিয়ার মধ্য দিয়ে হিজবুল্লাহর সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর এই সরবরাহ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তিনি বলেন, সংগঠনটি নতুন পথ খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করছে এবং সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে চায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিরিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিয়ে পশ্চিমা শক্তি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য, একটি স্থিতিশীল সিরিয়া গড়ে তোলা, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় থাকবে।
সিরিয়ার নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় কেবল দেশটির ভবিষ্যৎ নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি পরিবর্তন করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।