রাশিয়ায় আশ্রয় নিলেন সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত শাসক বাশার আল-আসাদ
- By Jamini Roy --
- 09 December, 2024
সিরিয়ায় দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটল বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত অভিযানের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তাঁর পরিবার বর্তমানে রাশিয়ার মস্কোয় অবস্থান করছেন। রাশিয়া তাঁদের মানবিক কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা মাত্র ১২ দিনের অভিযানে রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেয়। গত রবিবার বিদ্রোহীদের শহরে প্রবেশের পর বাশার আল-আসাদ দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজে করে দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে তাঁর অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুশ বার্তা সংস্থা তাস ও রিয়া নভস্তি জানিয়েছে যে, বাশার আল-আসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মস্কোয় পৌঁছেছেন।
১৯৭১ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন বাশারের বাবা হাফিজ আল-আসাদ। ২৯ বছরের শাসনের পর ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন বাশার। প্রথমে সংস্কারের পথে হাঁটলেও পরে তাঁর শাসন কঠোর দমননীতিতে পরিণত হয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় বাশারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে তিনি তা সহিংসভাবে দমন করেন। এই দমনপীড়নই গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। প্রায় ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং কয়েক লাখ সিরীয় তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
গৃহযুদ্ধে বাশার রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে টিকে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ের সংকট তাঁর মিত্রদের দুর্বল অবস্থায় ফেলে দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া বাশারকে সমর্থনে আগের মতো আগ্রহী ছিল না। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর নেতাদের মৃত্যুতেও মিত্রশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিদ্রোহীরা আলেপ্পো থেকে দামেস্ক পর্যন্ত কৌশলগত শহরগুলো দখল করে নিলে বাশারের বাহিনী প্রায় যুদ্ধ ছাড়াই পিছু হটে।
বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি দামেস্কের একটি মসজিদে দেওয়া ভাষণে বিজয় উদযাপন করে বলেন, "এই জয় সিরিয়ার সব মানুষের।"
দামেস্কে বাশারের বাবার ভাস্কর্য ভাঙা থেকে শুরু করে ইরানি দূতাবাসে হামলা পর্যন্ত নানা ঘটনা ঘটে। নতুন সরকার গঠনের আলোচনা চলছে বিদ্রোহীদের মধ্যে।
বাশার আল-আসাদের ২৩ বছরের শাসনকালে সিরিয়া একাধিক গৃহযুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। তাঁর শাসনের সমাপ্তি সিরিয়ার জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে এটি কতটা স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ হবে, তা সময়ই বলবে।