Logo

অপরাধ    >>   চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার: সনাতনীদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার: সনাতনীদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার: সনাতনীদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন

বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২৫ নভেম্বর সোমবার বিকেলে রাজধানী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালত প্রাঙ্গণে তার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন ভক্তরা।

রায় শেষে যখন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিয়ে যেতে প্রিজন ভ্যানে তুলতে গিয়ে উপস্থিত সনাতনীরা প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন এবং বলেন, "চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে জেতে দিবে না, তাকে নিয়ে যেতে হলে সনাতনীদের লাশের উপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে", তখন পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন সনাতনী আহত হন। এরপর পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সনাতনীদের ধাওয়া করে।সনাতনদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে।

এর আগে, ২৫ নভেম্বর গ্রেফতারের পর ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, চিন্ময় দাসকে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তখন কিছু জানানো হয়নি। গ্রেফতারের সময় চিন্ময় দাস শান্ত ছিলেন এবং কোনো বিরোধে জড়াননি বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলা দায়ের করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান, যিনি পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশে অংশগ্রহণের সময়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিছু সদস্য বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে। এই ঘটনার পর থেকেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিউমার্কেট মোড়ে এক ধর্মীয় গোষ্ঠী গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে ওই গ্রুপটি এই পতাকা উত্তোলন করে বলে অভিযোগ করা হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এই মামলাকে সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর চলমান হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদ।"

বর্তমানে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। ২২ নভেম্বর রংপুরে এই নতুন জোট তাদের আট দফা দাবির জন্য একটি সমাবেশ আয়োজন করে, এবং সমাবেশ শেষে ঢাকায় ফিরে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তার গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিন্ময় দাসকে মুক্তি না দিলে তারা কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এরই মধ্যে ইস্কন এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি করেছে।