দরিদ্র দেশকে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি
- By Jamini Roy --
- 24 November, 2024
জাতিসংঘের কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন গতকাল আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিনের আলোচনার পর প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ সহায়তা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দেওয়া হবে। এছাড়া, কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য একটি বৈশ্বিক কার্বন ক্রেডিট বাজার গঠনের চুক্তিতেও ঐকমত্য হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, দরিদ্র দেশগুলো বৃক্ষরোপণ, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো প্রকল্প গ্রহণ করবে। এতে এক টন কার্বন নিঃসরণ কমালে তারা একটি 'কার্বন ক্রেডিট' পাবে। উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থের বিনিময়ে এই ক্রেডিট কিনে নিজেদের কার্বন নিঃসরণের সীমা পূরণ করতে পারবে। প্রায় এক দশক ধরে এ বাজার গঠনের আলোচনা চলছিল। অবশেষে এ বছর তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়েছে।
দরিদ্র দেশগুলো দাবি করেছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে বছরে অন্তত ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তবে ধনী দেশগুলো শুরুতে বছরে মাত্র ২৫০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, টানা আলোচনা শেষে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টেইল বলেন, "এটা ছিল কঠিন একটি যাত্রা, কিন্তু আমরা অবশেষে চুক্তি করতে পেরেছি।" তবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানো নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা নিয়ে হতাশা রয়েছে।
বাকু সম্মেলনে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো ধনী দেশগুলোর সহায়তার প্রস্তাবকে 'লজ্জাজনক' ও 'অপর্যাপ্ত' বলে অভিহিত করে। সুইডেনের জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এই চুক্তিকে 'বিশ্ববাসীর জন্য মৃত্যু পরোয়ানা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় কপ-২৯-এর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "৩০০ বিলিয়ন ডলার অত্যন্ত অপ্রতুল। তহবিলের অর্থ অনুদান হিসেবে চিহ্নিত হয়নি এবং কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থার আওতায়ও রাখা হয়নি।"
নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোকে আরও পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গঠনে সহায়তা দেওয়া হবে। জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্বন ক্রেডিট বাজার ও উন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে সম্মেলনের পরিপূর্ণ সাফল্য নির্ভর করবে চুক্তির বাস্তবায়নের ওপর।