Logo

আন্তর্জাতিক    >>   রাশিয়ার ‘অপ্রতিরোধ্য’ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত: পুতিন

রাশিয়ার ‘অপ্রতিরোধ্য’ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত: পুতিন

রাশিয়ার ‘অপ্রতিরোধ্য’ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছেন যে তাঁর দেশের কাছে নতুন ধরনের শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রয়েছে এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শুক্রবার এক অনির্ধারিত টেলিভিশন ভাষণে পুতিন দাবি করেন, শব্দের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন ‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। তিনি বলেন, "ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রস্তুত আছে এবং যেকোনো সময় এগুলো কাজে লাগানো হবে। আমাদের এই অস্ত্রকে আটকানো যাবে না।"

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার সামরিক গবেষণার একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন বলে মনে করা হচ্ছে। পুতিন জানিয়েছেন, এটি শব্দের চেয়ে দশ গুণ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে এবং কার্যত যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে সক্ষম। পুতিন একই সঙ্গে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমাদের কাছে এর পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।"

রাশিয়ার এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে নতুন করে সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনের নিপ্রো অঞ্চলে নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ তিন ঘণ্টা পর্যন্ত শোনা যায়। ইউক্রেন দাবি করেছে, রাশিয়া এই হামলায় আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) ব্যবহার করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্রথম ব্যবহৃত হলো।

কিয়েভের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল অস্বাভাবিক এবং এতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিশ্বনেতাদের কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "পুতিনকে তাঁর কৃতকর্মের বাস্তব পরিণতি অনুভব করাতে হবে।"

রাশিয়ার নিপ্রো হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের ভূমিকা নিয়েও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিয়েভ দাবি করেছে, তারা মার্কিন ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড)’ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করার অনুরোধ জানিয়েছে।

পুতিন তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, "ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন একটি অস্ত্র, যা বিশ্বের কোনো দেশ প্রতিরোধ করতে পারবে না। এটি আমাদের প্রতিরক্ষায় এবং আক্রমণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।" একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "যদি ইউক্রেন আরও হামলা চালায়, তাহলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর হবে।"

এদিকে রাশিয়ার পাঁচজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসতে রাশিয়া কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা ত্যাগ এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলো নিয়ে বড় কোনো ছাড় না দেওয়ার বিষয়। তবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কোনো চুক্তি হলে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে পারে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে রাশিয়া যে একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে চায়, তা স্পষ্ট। পশ্চিমা মিত্রদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার অস্ত্রের জবাবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া এবং পুতিনের এই ভাষণ বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ সমাপ্তি কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। নতুন অস্ত্রের ব্যবহার যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।