খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ নেই: দুদক আইনজীবী
- By Jamini Roy --
- 10 November, 2024
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রেক্ষাপটে পুনরায় শুরু হয়েছে উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এই মামলায় বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীরা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তবে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান।
রবিবার (১০ নভেম্বর) আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে করা লিভ টু আপিলের শুনানি হয়। শুনানিতে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। দুদকের পক্ষ থেকে মামলায় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান, যিনি জানান, ট্রাস্টের অর্থ ট্রাস্টের ফান্ডেই রয়েছে এবং খালেদা জিয়া কোনও আত্মসাৎ করেননি।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে বঙ্গভবনে বৈঠক করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দণ্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত নেন। তার পরের দিনই রাষ্ট্রপতির মওকুফ আদেশের গেজেট প্রকাশিত হয়। তবে, এই আদেশ থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলাটি আইনগতভাবে মোকাবিলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দ্রুত শুনানির আবেদন করা হয়, যাতে তারা নিজ খরচে পেপারবুক প্রস্তুত করতে পারবেন। এই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ আবেদনটি মঞ্জুর করে। আইনজীবীরা জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা গ্রহণ না করে খালেদা জিয়া নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চান।
খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। একই মামলায় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ অন্যান্য আসামিদেরও একই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
এই দুই মামলায় রাষ্ট্রপতির মওকুফ আদেশের পরও খালেদা জিয়া নিজের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ৩ নভেম্বর লিভ টু আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগেও খালেদা জিয়া ও তার সমর্থকেরা মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।
এই মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও, বেগম জিয়া এটি ব্যবহার করতে চাননি। তিনি বিশ্বাস করেন তিনি অপরাধ করেননি এবং আইনি পথেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন।”
আদালত মামলার শুনানি সোমবার (১১ নভেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি রাখার সিদ্ধান্ত নেন। রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মামলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “দুদকের এই মামলা দেশের আইনি ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুরুত্বপূর্ণ। খালেদা জিয়া এবং অপরাপর আসামিরা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত।”
এখন খালেদা জিয়া ও তার আইনজীবীরা রাষ্ট্রপতির মওকুফ আদেশকে পাশ কাটিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।