বরিশালে উদযাপিত হলো উপমহাদেশের বৃহত্তম শ্মশান দীপাবলি উৎসব
- By Jamini Roy --
- 31 October, 2024
বরিশালের কাউনিয়া মহাশ্মশানে বুধবার ( ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ) রাতে অনুষ্ঠিত হলো উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি উৎসব। বরিশাল মহাশ্মশান উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে বৃহৎ শ্মশান হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২০০ বছর পুরনো এই শ্মশানটিতে ১৯২৭ সাল থেকে প্রতি বছরই দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করা হয়ে আসছে। বরিশাল নগরীর কাউনিয়ায় অবস্থিত এই মহাশ্মশানে কালীপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশীর পুন্য তিথিতে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন প্রয়াত প্রিয়জনদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
প্রতিবছর ভূত চতুর্দশীর দিন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা তাদের প্রয়াত স্বজনদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো শ্মশান। প্রিয়জনদের সমাধি মোমবাতি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয় এবং তাদের স্মরণে তাদের প্রিয় খাবার সমাধির পাশে রেখে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুই দিনব্যাপী চলা এই দীপাবলি উৎসবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, এই আলোর মাধ্যমে তারা অন্তরের অন্ধকার দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানান। ভূত চতুর্দশী তিথিতে প্রয়াত স্বজনের আত্মার শান্তি কামনা ও মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে তাদের প্রিয় খাবার নিবেদন করা হয়।
প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া ও নতুন বাজার এলাকায় প্রায় ৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বরিশাল মহাশ্মশান। শ্মশান রক্ষা কমিটি জানিয়েছে, বর্তমানে এখানে প্রায় ৬১ হাজার সমাধি রয়েছে, যার মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি পাকা এবং ১০ হাজার কাঁচা সমাধি। এছাড়া ৮০০ মঠ রয়েছে যেগুলোর স্বজনরা বিদেশে অবস্থান করছেন বা আর জীবিত নেই, এই মঠগুলো হলুদ রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মহাশ্মশান কমিটির পক্ষ থেকে সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
এই শ্মশানে ব্রাহ্মণদের ২ থেকে ৩টি প্রাচীন সমাধি ছাড়াও বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাসের বাবা সত্যানন্দ দাস, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, শিক্ষাবিদ কালিচন্দ্র ঘোষ এবং মনোরমা মাসি মায়ের মতো ব্যক্তিত্বদের সমাধিও রয়েছে। মহাশ্মশানের এসব ঐতিহাসিক সমাধি আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।
প্রতি বছর দীপাবলি উপলক্ষে বরিশাল মহাশ্মশানে প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষ উপস্থিত হন, যাদের অনেকে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন পূর্বপুরুষের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। দীপাবলির আলোর মধ্যে প্রয়াতদের স্মরণ এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই আয়োজন কেবল বরিশাল নয়, বরং উপমহাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
উৎসবকে ঘিরে বরিশাল মহানগর পুলিশের তত্ত্বাবধানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কাউনিয়া থানার ওসি জানান, মহাশ্মশানের পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছে, এবং পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও অন্যান্য বাহিনী নিরাপত্তায় নিযুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকও দর্শনার্থীদের সাহায্যে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে বরিশালের মহাশ্মশানে দীপাবলি উদযাপনের মাধ্যমে প্রয়াতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত এই উৎসব নতুন প্রজন্মের জন্য ঐতিহ্য ও স্মৃতির এক বিশেষ পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।